ব্রেক্সিট চুক্তি বাঁচাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রাসেলসের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্রেক্সিট চূড়ান্ত করার বাকি আর মাত্র ১০ সপ্তাহ। এটুকু সময় হাতে নিয়ে মে ইইউয়ের সঙ্গে আলোচনায় নতুন করে কোনো প্রস্তাব দেবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় যেতে ইইউও রাজি নয়।
দুই বছর ধরে ইইউর সঙ্গে আলোচনার পর মে ব্রেক্সিট চূড়ান্ত করার জন্য যে চুক্তির প্রস্তাব এনেছিলেন গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তা নাকচ হয়ে যায়। এখন নতুন করে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। ফলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রিটেনকে ইইউ ছাড়তে হবে।
পার্লামেন্টে ওই ভোট হওয়ার পর মে বিরোধীদলীয় এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে বিরোধী শিবির থেকে সমালোচনা উঠেছে যে মে তাঁর প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মে তাঁর নিজ দল এবং জোটের অন্যতম সঙ্গী নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। কনজারভেটিভ পার্টি এবং ডিইউপি ব্রেক্সিট চুক্তির ‘ব্যাকস্টপ’ পরিকল্পনার পক্ষে নয়। এতে আইরিশ সীমান্ত ও আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পরও খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। এই দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। ব্রেক্সিটের পরও সেই চুক্তিগুলো অক্ষুণ্ন থাকবে বলে নতুন প্রস্তাবে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
মে গত সোমবার হাউস অব কমন্সকে বলেন, তিনি এ সপ্তাহে ডিইউপিসহ তিনি তাঁর বাকি সহকর্মীদের সঙ্গে আরো আলোচনা করবেন। এই আলোচনার সারমর্ম নিয়ে তিনি আবার ইইউতে দেনদরবার করতে যাবেন। সে সময় তিনি ব্রাসেলসকে কী ধরনের প্রস্তাব দেবেন সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেননি। তবে ব্যাকস্টপের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হবে বলে পোল্যান্ড যে প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিরোধী দলের অভিযোগ, মে পার্লামেন্টে তাঁর প্রস্তাবের পরাজয় মেনে নিতে চাইছেন না। এই চুক্তিতে সবার সম্মতি আদায় করতে যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ইইউয়ের সঙ্গে দর-কষাকষি করে মে সেটাও আনতে পারবেন না বলেই অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেখাতে চাইছেন যে তিনি ফলাফল মেনে নিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।’ লেবার পার্টি অবশ্য ‘চুক্তি ছাড়াই’ ব্রেক্সিটের আশঙ্কা দূর করতে বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গণভোট আয়োজনের পক্ষে এমপিদের ভোট দিতে অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। গত সোমবার তোলা এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় সময় লাগবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ব্রেক্সিটের অনিশ্চয়তাগুলোর মীমাংসা করার ওপর জোর দিয়েছে। যদিও ইইউ নেতারা ব্রেক্সিট নিয়ে আবারও আলোচনায় বসতে সম্মত নয়। বরং বিচ্ছেদের পর দুই পক্ষের রাজনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়টি তারা কথা বলতে চায়। সূত্র : এএফপি।