মোবারক হোসেনঃ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষনা করেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এর আগে এতো আলোচনা পর্যালোচনা আর হয়নি। বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল থেকে নাম নিয়ে সার্চ কমিটি ১০ জনের তালিকা প্রেরণ করেন। সে আলোকেই ঘোষনা করা হয় নতুন নির্বাচন কমিশন। নতুন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ ও হতাশা চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হতাশা চলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে নিয়ে চলছে সমালোচনা। তাকে জনতার মঞ্চের আমলা হিসেবে বলা হ”েছ। জনতার মঞ্চের একজন নায়ক হিসেবেও বলা হ”েছ। অভিযোগটি সত্য। তবে নুরুল হুদাকে নিয়ে এতো বিতর্কে আমার অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খা”েছ। আমি নিজে তখন সাংবাদিকতার সহিত জড়িয়ে পড়ি।
¯’ানীয় পত্রিকায় কাজ করি। সে সুবাধে ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তাকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তবে নতুন সাংবাদিকতার কারণে বেশি যোগাযোগ হয়নি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ভয়েজ অব আমেরিকা ফ্যান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একবার তার নিকট থেকে বাণী এনেছিলাম। রাজনীতির সহিতও কিছুটা জড়িত ছিলাম। তারপর অনেকদিন নুরুল হুদাকে জানা হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠনের পরই জানতে পারলাম। এখন তার অনেক পরিবর্তন চেহারায়। তখনও তিনি কুমিল্লার একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ডিসি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার রাজনৈতিক ভাবধারা সম্পর্কে আমার জানার সুযোগ হয়নি। কারণ আমি তখনও জুনিয়র ছিলাম। জেলা প্রশাসকের কাছে যাওয়ার মত সাহসও কম ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে। হয়তো এগুলো নিয়ে অনেকের বক্তব্য থাকতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত মতামতটি তুলে ধরছি। আমার সাংবাদিকতায় যা দেখেছি কুমিল্লা প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে যারা জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশ সুপার হয়ে আসেন তারা পরবর্তীতে অনেক বড় জায়গায় যাবার সুযোগ পায়। কুমিল্লা চাকুরি করা মানেই সচিব হওয়া। দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অব¯’ান করা। সাম্প্রতিক সময়ে যা দেখেছি অনেক কর্মকর্তাই এখান থেকে প্রমোশন নিয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ¯’ানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই আলোকে আমার বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকা অব¯’ায় তিনি ডিসি হিসেবে কুমিল্লায় কিভাবে ছিলেন? ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয়ের পেছনে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কি অবদান ছিল না। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বসে কি বিজয়ী ঘোষনা করা হয়নি? অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন ১২ জুনের নির্বাচনে কুমিল্লায় বিএনপি ৪ টি আসন পেয়েছিল। তার জন্য নাকি তিনি দায়ী। আমার প্রশ্ন জেলা সদরের আসনটিতে নির্বাচন করেছিলেন খাস আমলা হিসেবে পরিচিত এটিএম শামসুল হক। সে নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে। অপরদিকে আকবর হোসেন নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার জন্য কে দায়ী? ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি কুমিল্লার ১২টি আসনের মধ্যে ৯টিতে বিজয়ী হয়েছিল। ২টিতে জাতীয় পার্টি। সে সময়ের এমপি মন্ত্রী মহোদয়রা কি জানতেন না নুরুল হুদা কোন দলের সমর্থক? তারপর ২০০১ সালের পর কেন তার প্রমোশন হলো। কেন সেই সময় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যব¯’া নেওয়া হলো না? জনতার মঞ্চের কৌশলীরা কিভাবে বেঁচে গেলেন। আমি কারো পক্ষে বলছি না। বর্তমান সরকার বিএনপির মত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবে এই স্বপ্ন দেখা কতটুকু যৌক্তিক হতে পারে? কমিশন গঠনের আগে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলোচিত হয়। অনেকেই বলে ফেলেছিলেন কারা হ”েছন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কে এম নুরুল হুদার নাম তেমন আলোচিত হয়নি। গত কয়েক বছর যাবৎ অনেক কর্তা ব্যক্তির নাম শোনা গিয়েছিল। যারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। অনেক বড় বড় আমলাও বিতর্কিত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে নুরুল হুদাকে প্রধান কমিশনার করা হয়েছে। বিএনপি অন্যান্য কমিশনারের বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। ৪ বার দেশ চালানো যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা পরিচিত ৫ জন ব্যক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে মিটিং এর পর মিটিং করতে হয়। এই ব্যর্থতা কার?
নির্বাচন কমিশনের কাজ একটি সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন করা। তাও সরকারের সহযোগিতায়। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সরকার কতটুকু সহযোগিতা করবে সেটাও দেখার বিষয়। বিএনপিকে কমিশন নিয়ে না ভেবে কমিশনের কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষন করতে হবে। কমিশনের কার্যক্রমের উপরই আন্দোলনে যাওয়া উচিত। তার আগে নয়। সংগঠনকে ঠিক করতে হবে। আপন পর চিনতে হবে। গন্তব্য কোথায় সেটা নির্ধারন করতে হবে। স্বপ্ন দেখাতে হবে। ভিশন কি বলতে হবে। জনগনের মনের কথা বুঝতে হবে। জনগন কি চায় কিভাবে চায় তা বুঝতে হবে। স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ হলে জনগন প্রত্যাখান করবে। স্বপ্ন ও ভিশন দেখাতে পারলে জনগনই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে। মনে একটা বলায় আরেকটা তা হবে না। আত্ম সমালোচনা করেই সামনে এগোতে হবে।
মোবারক হোসেনঃ সম্পাদক , সাপ্তাহিক গোমেতি সংবাদ