গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির :বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় “করোনা ভাইরাস” পত্র- পত্রিকা,টিভি- রেডিও,ফেইসবুক- ইউটিউব টুইটার সহ সকল সামাজিক মাধ্যমে, সভা- সেমিনার ,টকশো সবখানেই এক আতংকের নাম ” করোনা”। সারা বিশ্ব আজ মৃত্যু শোকে স্তব্ধ ।গত ১৭ মার্চ ২০২০ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। ইত্যিমধ্যে জনসমাগমের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ দূরপাল্লার জনপরিবহন, বিমান, রেল, লঞ্চ – বাস বন্ধ এবং সেনাবাহিনী নামানো হল। লকডাউন দেওয়া হল।এক অজানা,অদেখা- অদৃশ্য ভাইরাসে আজ আমরা আতংকিত। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বকে হে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করুন, এই আপদ থেকে হেফাজত করুন।
করোনার আগ্রাসনঃ
সারা বিশ্বে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং এ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গেছে। চীনের পর ইতালি, কোরিয়া, ইরান ও জার্মানি সহ বিশ্বের সব কয়টি রাষ্ট্র আজ আক্রান্ত। করোনা আগ্রাসনে পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি কাহিল। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ মারা যান। অন্যান্য দেশের শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রেসিডেন্ট, ভাইজ প্রেসিডেন্ট, সেনা কমান্ডার,মন্ত্রী এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত । প্রতিদিন নতুন নতুন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, কোথাও শ্লথ, কোথাও দ্রুত হারে। বিশ্বের মানুষ আজ দিশেহারা, আতংকগ্রস্ত।
স্থবির হয়ে গেছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ইরান সহ বেশ কয়েকটি দেশ। এ দিকে, ইরান, ইতালি স্পেন, ফ্রান্স, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ কোয়ারেন্টাইন অবস্থা ঘোষণা করেছে। ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ।যা চীন প্রথমে করেছিল কয়েকটি প্রদেশ ও শহরে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব অনুষ্ঠান স্থগিত। মসজিদ – মন্দির- গীর্জায় প্রার্থনা বন্ধ। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চিকিৎসা, তদবীর,দোয়া- দরুদ,ইবাদতের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। চীন সহ আধুনিক বিশ্ব এতে আকৃষ্ট হচ্ছে। ধর্ম বিদ্বেষী চীন মসজিদমুখী হয়েছে। ভারতে গোবর ও গোমুত্র ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলতঃ সারা বিশ্ব এখন অচল।
করোনার ইতিবৃত্তঃ
এটি শ্বাস, ফ্লু ও নিউমোনিয়া সদৃস উপসর্গ দিয়ে শুরু। একটি ভাইরাস জনিত প্রাণঘাতি রোগ। সাধারণতঃ ফ্লু দিয়ে শুরু এবং শ্বাসকষ্ট ও শেষে নিউমোনিয়ার পর্যায় গিয়ে এই ভাইরাস ঘাতকরুপ ধারণ করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের হুয়ানান নামের একটি কেন্দ্রীয় বা পাইকারি সামুদ্রিক মাছ ও বন্য প্রাণীর বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে যে শহরের জনসংখ্যা ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি দশ লাখ। এই ভাইরাস প্রথমে” উহান ভাইরাস” নামে এবং চীনে সনাক্ত হয়েছে বলে ” চীনা ভাইরাস” নামেও পরিচিতি লাভ করে। বিশেষজ্ঞরা প্রথমে করোনা ভাইরাসকে ” ২০১৯- এনসিও ভি করোনা” ( N Cov corona)নামকরণ করেন। ২০১৯ সালে এটি সনাক্ত হওয়ায় এটাকে ২০১৯ দিয়ে শুরু করা হয়। একে বলা হয় নভেল করোনা অর্থাৎ নতুন করোনা যেহেতু এর আগে আরো ছয় প্রকার করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছিল। নভেলের “n” করোনা ‘CO’ এবং ভাইরাসের ‘V’ দিয়ে লেখা হয় nCOV Corona । চীনে প্রথমে ১৯৬০ সালে এবং পরে ২০০০ সালে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। কমবেশি ২০০০ ধরনের ভাইরাসের মধ্যে সাত প্রকার করোনা ভাইরাস রয়েছে যার সবগুলিই প্রাণঘাতি নয়। ২০০২-০৩ সালে চীনে ” সার্স” বা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণ বা সিন্ড্রোম(SARS-Severe Acute Perperafons Symptom) দেখা দেয় এবং তখন চীনে ৬৫০ জন এবং অন্যান্য দেশে ৭৭৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়। সেটি ছড়িয়েছিল২৪/২৫ টি দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আট হাজারের বেশি। সার্স ক্ষুদ্রাকৃতির বন্য চিত্রা বিড়াল থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। করোনার মূল উৎস হচ্ছে চীনা ক্রেইট বা বাদুর এবং কোবরা সাপ। এই ভাইরাস বাতাসে মিশে প্রাথমিক ভাবে স্থন্যপায়ী প্রাণী ও পাখির শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমন করে। ফলে জ্বর, শর্দি ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গ দেখা দেয়।
কভিড-১৯ঃ উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস যাকে এতদিন “২০১৯- এনসিও ভি করোনা” বলে জেনেছি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা তার নতুন নামকরণ করেছে ” কভিড-১৯”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মহা পরিচালক গত ১১ /০২/২০২০ তারিখে জেনেভার এক সংবাদ সম্মেলনে এর নতুন নামকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন ” করোনা ভাইরাস ডিজিজ২০১৯” – এর সংক্ষিপ্ত রুপ। বর্তমান নামকরণটি করা হয়েছে তিনটি শব্দ থেকে – ‘করোনা’ ‘ ভাইরাস’ ও ‘রোগ’ । নতুন নামকরণ করোনা ( Corona) থেকেco, ভাইরাস( Virus)থেকে vi এবং ডিজিজ ( Disease)থেকে ‘d’সমন্বয়ে নাম দেয়া হয়েছে Covid-19। ২০১৯ সালে সনাক্ত করা হয়েছিল বলে ১৯ যুক্ত করা হয়েছে। ভাইরাসের নাম প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা” ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব টেক্সনামি অব ভাইরাসেস” এই ভাইরাসটিকে সার্স – সিওভি- ২ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। এই ভাইরাসকে ‘ চীনা করোনা ‘ বা ‘উহান করোনা নামে’ প্রথম দিকে প্রচারিত হওয়ায় চীনের প্রতি ইংগিত করা হয়। এখন থেকে এটি ” কভিড- ১৯ নামে পরিচিত হবে। আরেকটি বিষয়, করোনা ভাইরাস আসলে কোন রোগের নাম নয়, এটি ভাইরাস গ্রুপের নাম।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ মিশন কভিডের কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ চিহ্নিত করেছেন। যেমন,জ্বর ও শুষ্ক কার্শি- সর্দি দিয়ে শুরু, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, কাপনি, অবসন্নতা, এবং শেষে জ্বর থেকে নিউমোনিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে যার পরিনতি মৃত্যু। করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে আক্রমন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে এটি ছোঁয়াচে।এর দ্বারা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসের অবস্থান প্রাকৃতিক পরিবেশে, সুযোগমত মানুষের শ্বাসযন্ত্রেে আক্রমন করে। সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি- কাশি, হাত- মুখের স্পর্শ, পোশাক ও ব্যবহৃত জিনিসপত্রেের সংস্পর্শে এই ভাইরাসেে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বঃ
পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার কথা ইসলাম বলে না বরং অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষাও দেয়। যিনি পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হচ্ছে, ” নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা লাভে সচেষ্টদেরও ভালোবাসেন। “( সূরা বাকারাঃ আয়াত- ২২২)। প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহ তায়ালার প্রেমিক তখনই হয় যখন তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার প্রতিও দৃষ্টি দেয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন নিজে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকতেন তেমনি সকলকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকার তাগিদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু মুসা আশআরী ( রাঃ) বর্ণনা করেন মহানবী ( দরুদ) বলেছেন, আত্তুহুরু শাতরুল ঈমান” অর্থাৎ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ঈমানের অঙ্গ। ( মুসলিম শরীফ, কিতাবুল তাহারাত, বাবু ফাযলু ওয়াযু) । একজন মুমিন শুধু নিজে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকলেই চলবে না বরং চারপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ, যে কোন রোগ- ব্যাধি অপরিচ্ছন্নতার কারণেই বেশি ছড়ায়। করোনা সহ যে কোন ধরনের সংক্রমণ থেকে জীবাণুমুক্ত থাকতে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।
মহামারি সম্পর্কে ইসলামঃ
মানব জাতির জন্য নিজেদের প্রাণের শংকা রয়েছে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তাই করোনার কারণে জুমা ও অন্য ফরজ নামাজের জামাত মসজিদে আদায় স্থগিত করে উচ্চঃস্বরে আজান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেননা “যখন বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা- ই রেখা হয়, যা সে আবাসে সুস্থ অবস্থায় আমল করত। ” ( সহিহ বোখারিঃ২৯৯৬)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ” নিজের ক্ষতি করা যাবে না, অন্যের ক্ষতি করা যাবে না “। ( ইবনে মাজাহঃ২৩৩১)।
পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হচ্ছে, ” তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না “। ( সূরা, বাকারাঃ১৯৫), সূরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ” তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু “। হাদিস শরীফে এসেছে, প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক”। ( সহিহ বোখারি ৫৭১৭)। অন্য এক হাদিস শরীফে এসেছে, ” কেউ যেন রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সঙ্গে না রাখে” ( বোখারিঃ৫৭৭১)।
করোনা প্রতিরোধে সতর্কতাঃ
বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোন দেশই ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ, বাণিজ্য, পরিবহন, তথ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজে নামতে হবে। তিনি আরো বলেন, ” রোগ শনাক্তের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। হাসপাতাল প্রস্তুত রাখুন। অত্যাবশ্যক সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করুন”।
উপসর্গঃ
জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, মাংসপেশি বা গাঁটে ব্যথা। বয়স্ক রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। যেসব করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ, উচ্চরক্তচাপ, ক্যানসার বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
যেভাবে বিস্তার ঘটেঃ
মূলত হাঁচি- কাশির সময় এয়ার ড্রপলেটের মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে, ভাইরাস আছে এমন কোন জায়গা বা আসবাবপত্র স্পর্শ করে হাত না ধুয়ে মুখে- নাকে বা চোখে হাত লাগালে।
করণীয়ঃ
১। ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে; ২। হাঁসি- কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে, ( পরিষ্কার রুমাল, টিস্যু পেপার বা হাত দিয়ে) ; ৩। ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে সর্তক থাকতে হবে; ৪। মাছ, মাংস, ডিম খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে ; ৫। বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত পশুপাখিকে খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না; ৬। মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে;৭। সব সময় পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ;৮। ঘনবসতি এলাকায় পিছিয়ে থাকা মানুষদের সরকার/ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ সহযোগিতা করতে হবে ;৯। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে ; ১০। যতটা সম্ভব ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে।
চিকিৎসাঃ
প্রাথমিকভাবে ১। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ; ২। প্রচুর পানি পান করতে হবে; ৩। উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। শ্বাসকষ্টের মত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কাবার ইমামের আবেগঘন টুইটঃ
হে আল্লাহ! আপনার ঘর থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করবেন না। হে আল্লাহ! আমাদের পাপের কারণে পবিত্র মসজিদের নামাজ- জামাত থেকে বঞ্চিত করবেন না। হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমাদের আবার ফিরিয়ে নিন। হে আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন। হে আল্লাহ! আমাদের এবং মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের মহামারি ও দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করুন। কাবা শরীফের প্রধান ইমাম শায়খ ডঃ আব্দুর রহমান আস -সুদাইসির আবেগঘন এ আহবান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এভাবেই ওঠে এসেছে। তিনি, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করেন,হে আল্লাহ! মুসিবত দিন দিন কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। আপনি ছাড়া আমাদের ফরিয়াদ শোনার আর কেউ নেই, হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কে আছে? হে আল্লাহ! আমাদের এ অবস্থার ওপর দয়া করুন। আমাদের অক্ষমতা গুলো দূর করে আমাদের ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! তুমিই আমাদের অভিভাবক। তার আবেগঘন টুইটে মুসলিম হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, হে আল্লাহ! এ বিপদ মহামারির কারণে তোমার ঘরে যেতে না পারার ব্যথা আর সইতে পারছি না । হে মহান শক্তিমান,দয়া করে এই মহামারি দূর করে দাও। এ দিকে, আজান সম্পর্কে তিনি টুইটে লেখেন, আজ থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে শুনতে হবে ” সাল্লু ফি রিহালিকুম” অর্থাৎ” নিজ নিজ জায়গায় নামাজ পড়ে নাও “। অন্য আরেক টুইটে তিনি লেখেন, হে আল্লাহ! আমাদের সে সব বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা নেয়ামত প্রাপ্ত- নেয়ামত পেলে শোকর আদায় করে। বিপদে সবর করে। গোনাহ হলে তওবা করে। প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাসের এ বিপদ মুহুর্তে তিনি বেশি করে এ দোয়া পড়তে বলেন, ” লা হাউলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম”। এ দোয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এ দোয়া পড়ার মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং আল্লাহর প্রশান্তি, দয়া ও মদদ পাওয়া যায়। করোনা থেকে মুক্তিতে তিনি আল্লাহর কাছে এভাবে আবেদন করেন, হে আল্লাহ! তোমার কাছেই আমানত রাখছি এই পবিত্র নগরী হারাম শরীফ ও তার বাসিন্দাদের। নারী- পুরুষ, যুবক- বৃদ্ধ- শিশু, ঘর- বাড়ি, আকাশ – জমিন সবকিছুই তোমার কাছে আমানত রাখলাম। দয়া করে তুমি এগুলোকে মহামারি থেকে রক্ষা কর। তোমার মহান কুদরতে তুমি করোনা ভাইরাস দূর করে দাও। সবার জন্য সাহস জোগাতে লেখেন, বিপদ যত বড় হোক, তা চিরদিনের নয়। বরং বিপদ যত বড় হোক না কেন, আল্লাহ রহমত তার চেয়ে অনেক বড়। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমাদের মুক্তি অতি নিকটেই। সুতরাং হতাশ হবেন না। অধৈর্য হবেন না। অস্থিরতা প্রকাশ করবেন না। আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকুন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন।
আমার বিশ্বাস থেকে বলছিঃ
বিভিন্ন বালা-মুসিবত, বিপদ- আপদ বা মহামারি আসে মূলত মানুষকে স্রষ্টামুখী করার জন্য । কারন,মানুষ দুনিয়ার জগতে স্রষ্টাকে ভুলে নানাহ পাপাচারে, গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে যখন অন্ধকারে ডুবে যায় তখনই বান্দাকে আল্লাহমুখি করাতে এ ধরনের মহামারি আসে। দুই,আমরা যদি স্রষ্টার সৃষ্টির উৎস এবং আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ মনে – প্রাণে গ্রহন করি, অনুসরন- অনুকরণ করি তাহলে সহজেই আমরা এসব মহামারি থেকে মুক্তি পেতে পারি। কালে কালে দুর্যোগ, মহামারি আসে আবার মহান আল্লাহর রহমতে চলে যায়। বান্দা মুক্তি পায়। দুনিয়া জীবন ঈমানদার- মুমিন মুসলমানদের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। আরেকটি কথা, কাবার ইমাম সাহেব, বর্তমান সময়ের সব চাইতে আতংকের নাম- যার কারণে আজ সারা পৃথিবী স্তব্ধ সেই ” করোনা” ভাইরাস নিয়ে চমৎকার বলেছেন।
আসুন! মহান আল্লাহর রহমত ও দ্রুত মুক্তির জন্য আল্লাহর প্রিয় হাবিব হুজুর পূণনুর রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মোবারকের বরকতে হযরত আদম ও মা হাওয়া ( আঃ) এর তওবা কবুল হওয়ার ঘটনা সহ অসংখ্যক উদাহরণ পাওয়া যায়; সেহেতু সেই নবীজির নাম মোবারকের উছিলা ধরে, তওবা করে, মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি। আরেকটি কথা, মসজিদ বন্ধের ঘোষণা করলেই করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এমনটি নয়। বিষয়টি আলেম সমাজের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। করোনার বিস্তাররোধে, দেশ- জাতির স্বার্থে সীমিত আকারে বন্ধের প্রয়োজন হতে পারে। তবে, তা যেন- কোন বিদ্বেষ বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে না হয়। রোগ- ব্যাধি থেকে রক্ষার ক্ষমতা কেবল মহান আল্লাহ তায়ালার। শুধু মসজিদে না গেলেই বেঁচে থাকা যাবে এমন নয়, বরং অন্য কোনভাবেও মানুষ তাতে আক্রান্ত হতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাইঃ করোনা ভাইরাস সহ সকল প্রকার মহামারি, বালা- মুসিবত থেকে মুক্ত থাকার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করি, কোরআনকে হৃদয়ে ধারণ করি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পথ, মত ও আদর্শ গ্রহন করি। ভাল কাজ -সুন্দর চিন্তা করি – অন্যকে ভাল ও সুন্দর রাখি। নিজে নিরাপদ থাকি- অন্যকে নিরাপদে রাখি। আলোকিত – সুন্দর ও নিরাপদ জীবন রক্ষায় করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হই – সর্তক থাকি এবং অপরকে সর্তক করি। নিরাপদ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি- করোনার টিকা গ্রহন করি।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট, কুমিল্লা।
মোবাইলঃ০১৭১৮-২২৮৪৪৬ , ই- মেইল- jahangirjabir5@
gmail.com
Leave a Reply