মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

আরো তিন আইসিস বধু, ফিরতে চান বৃটেনে

মানবজমিন
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪৫৯ বার

জিহাদি বধু শামীমা বেগম সিরিয়ার যে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন, সেই একই শিবিরে আরো কমপক্ষে তিনজন বৃটিশ জিহাদি বধু অবস্থান করছেন। এদের বিষয়ে এর আগে জানা যায়নি। সর্বশেষ গত সপ্তাহের রোববার ডেইলি মেইল এ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে। আজ রোববার একই পত্রিকা জানিয়েছে, ওই তিন বৃটিশ জিহাদি বধু এখন বৃটেনে ফেরার চেষ্টা করছেন। বলা হয়েছে, তারা সিরিয়ার আল রৌজ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। তাদেরকে ‘হাওলা’র মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন এবং সমর্থকরা অর্থ সরবরাহ দিচ্ছে। কিন্তু বৃটিশ সন্ত্রাস বিষয়ক আইনের অধীনে বিদেশে যদি আইসিসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে কেউ অথবা যদি তাদের প্রতি অনুগত হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কাছে অর্থ পাঠানো বেআইনি। এ অপরাধে বৃটেনের আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান আছে।

ওই জিহাদি বধুরা ডেইলি মেইলের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন একটি শর্তে। তাহলো তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। তারা বলেছেন, বৃটিশ আইসিস বধুদের সিরিয়ার আল হোল ক্যাম্প থেকে অর্থের বিনিময়ে তুরস্ক পৌঁছে দিচ্ছে পাচারকারীরা। তুরস্ক থেকে ওইসব জিহাদি বধু যাতে বৃটেনে ফিরে যেতে পারে। এছাড়া ওই ক্যাম্পে অবস্থানরত বৃটিশ নারীরা ক্লাসে যুক্ত হচ্ছে, যেখানে তাদেরকে শিখানো হয় কিভাবে পশ্চিমা পোশাক পরতে হয়, মিউজিক ভিডিও কিভাবে দেখতে হয় এমনকি জুম্বা ক্লাসে যোগ দেন। এছাড়া তারা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের কাছ থেকে মিউজিক ডাউনলোড করে। নিজেদের তাঁবুতে আয়োজন করে লেট-নাইট পার্টি। ছেলেদের বয়স ১৩ বছরে পৌঁছানোর পর তাদেরকে নারীদের শিবির থেকে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে তারা কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে।

আল রৌজ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন প্রায় ৮০০ পরিবার। এই শিবিরটি তুরস্ক ও ইরান সীমান্তের কাছে। এসব শিবির থেকে কেউ যাতে পালাতে না পারে সেজন্য চারপাশে উঁচু করে বেড়া দেয়া হয়েছে। ভিতরে আছে নার্সারি, স্কুল, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং দোকানপাট। আইসিসের পুরুষ যোদ্ধাদের আলাদা শিবিরে এবং জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন একজন বৃটিশ নারী ‘নাজমা’র স্বামীও রয়েছেন। ২০১৯ সালের মার্চে বাঘোজে আইসিসের শক্ত ঘাঁটির পতনের পর তাকে আটক করা হয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে নাজমার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আশা করেন, আইনি লড়াই করে তিনি বৃটেনে ফিরতে সক্ষম হবেন। তিনি বলেছেন, আমি যা বলবো তা আমার আইনজীবীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। আমি জানি আমার বিষয়ে, আমার পরিবারের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা সব জানে। তাই আশা করি, সব কিছু ঠিকঠাকভাবে এগুবে। আশা করি আমি সফল হবো। সম্প্রতি বৃটেনের সুপ্রিম কোর্ট আইএসবধু শামীমা বেগমের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বিষয়েও জানেন নাজমা। তবু তিনি আশা করছেন দেশে ফিরতে পারবেন।
১০ মাস আগে আল রৌজ শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার আগে নাজমা অবস্থান করছিলেন আল হোল শিবিরে। সেখানে দায়মুক্ত অবস্থায় মানব পাচার করে সিরিয়া এবং ইরাকের পাচারকারীরা। নাজমা বলেছেন, ওই পাচারকারীরা আমাকেও প্রস্তাব দিয়েছিল, যেমনটা তারা অনেক বৃটিশকে বলেছে। কিন্তু তাদের প্রস্তাব মানতে পারিনি। কারণ, আমার পা ভাঙা। তাছাড়া তারা যেভাবে যেতে বলছে তা নিরাপদ নয়। নাজমার আবেদনের শুনানি হতে পারে বৃটেনের স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন কোর্টে। তার আইনজীবীরা প্রায় সুনিশ্চিত যে, সেখানেও তার নাম উহ্য রাখা হবে।
ওই শিবিরে অবস্থান করছেন আরেকজন বৃটিশ যুবতী। মূল নাম প্রকাশ না করে তাকে ‘জান্নাত’ নামে অভিহিত করেছে ডেইলি মেইল। তিনি ২০১৫ সালের শেষের দিকে ধর্মান্তরিত তার শ্বেতাঙ্গ স্বামীর সঙ্গে সিরিয়া গিয়েছিলেন। জান্নাতের জন্ম মধ্যম শ্রেণির মুসলিম পরিবারে। তার পিতামাতা প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানী। জান্নাত বলেছেন, তাকে সিরিয়া নেয়ার জন্য তার স্বামী ফাঁদে ফেলেছিল। তাকে বলেছিল বিলম্বে হলেও তাকে হানিমুন করতে তুরস্কে নিয়ে যাচ্ছে তার স্বামী। কিন্তু তিনি দেখতে পান তাকে সীমান্ত অতিক্রম করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখন তার গর্ভে সন্তান। জান্নাতকে নিয়ে রাখা হয় তখনকার আইসিসের রাজধানী বলে পরিচিত রাকায়। এক বছর পর সেখানে মারা যান তার স্বামী। খেলাফতের পতন হলে তিনি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চলে যান। সেখানে আবার বিয়ে করেন। তার এই স্বামীও বিমান হামলায় মারা যান। জান্নাত তখন দুই সন্তানের মা। তাকে আটক করে রাখা হয়  বাঘোজ ক্যাম্পে। তিনি বলেছেন, মাঝেমধ্যে বৃটেন অবস্থানরত তার এক আত্মীয় অর্থ পাঠান তাকে। ক্যাম্পের ভিতরে অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা আছে।
এমন আরেক বৃটিশ জিহাদি বধু তিন সন্তানের মা ‘র‌্যাচেল’। তিনি জন্মেছেন বৃটেনে। তিনি ত্রিনিদাদ বংশোদ্ভূত। আল রৌজ শরণার্থী শিবিরে সম্প্রতি যাদেরকে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!