রাজধানী রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস যখন ইতালীয় প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে ইতালির সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সমস্যা লাঘবে অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বেশি আন্তরিক, ঠিক তখন উত্তর ইতালির বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির বারোটা বাজাচ্ছে মিলান কনস্যুলেট। কমিউনিটির মধ্যে হরেক রকম দলাদলি এবং নেক্কারজনক কোন্দল সৃষ্টিতে সিদ্ধহস্ত কলংকিত এই মিশন। নেপথ্যে অযোগ্য অকর্মন্য দুর্নীতিবাজ কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদের দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারীতা, যার কর্মকান্ডে যারপরনাই ক্ষুব্ধ সবাই। মিলান মিশনের সর্বশেষ অপকর্মের বলি হয়েছেন ভেনিসে বসবাসরত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।
দুর্নীতিবাজ কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ এ যাত্রায় ভেনিসে পুলিশ প্রশাসনের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটিকে। ১২-১৩ জুন ২০২১ ভেনিসে পূর্বনির্ধারিত কনস্যুলার ক্যাম্প মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে হঠাৎ করে বাতিলের কৈফিয়ত দিতে কনস্যুলেটের ফেসবুক পেইজে দেয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে শুধু শাক দিয়ে মাছ ঢাকারই অপচেষ্টা করা হয়নি, সেই সাথে কনস্যুলার ক্যাম্প বাতিলের জন্য পুলিশ প্রশাসনের (কস্তুরা) তরফ থেকে “শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা” না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে বলা হয়েছে,”সংশ্লিষ্ট কস্তুরা যেসব কঠিন শর্তের কথা বলেছে সেগুলো পরিপালন করে নিকট ভবিষ্যতেও ভেনিসে কোন ক্যাম্প আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয়না”।
ইতালীয় প্রশাসনের প্রতি চরম বিদ্বেষমূলক এবং সীমা লংঘন করা উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,”গত ২০-২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ভেনিসে ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে পুলিশ প্রশাসন (কস্তুরা) পরবর্তী ক্যাম্প আয়োজনের জন্য যেসব মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলো এবার রক্ষা করার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এমনকি অন্যান্য শহরে কনস্যুলার ক্যাম্পের জন্য মিশন যেসব সহায়তা পায়, ভেনিসের প্রশাসনের কাছে সেটুকুরও আশ্বাস পাওয়া যায়নি”। মিলান কনস্যুলেটের স্পর্ধাসূচক উপরোক্ত আত্মঘাতী বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ভেনিসের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। তারা বলছেন,”নিজেদের অপরিপক্কতা অপেশাদারিত্ব অপকর্ম ঢাকতে প্রশাসনের ঘাড়ে দোষ চাপানোর বেশ চড়া মাশুল দিতে হবে ভেনিসের নিরীহ প্রবাসী ভাই-বোনদেরকে”।
কনস্যুলেটের কেলেংকারির ফিরিস্তি ঘেটে জানা যায়, বিগত দিনে কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ কর্তৃক ভেনিসের স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেটকে অনৈতিক সুবিধা দেয়া এবং নিজেও ভাগ নেয়ার কারণেই মূলত ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে কমিউনিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, যাঁরা সত্যিকার অর্থেই বছরের পর বছর নিরীহ প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে। ভেনিসের স্থানীয় প্রশাসনের সাথে তাদের চমৎকার সম্পর্ক থাকার বিষয়টিও ভালো চোখে দেখেনি মিলান কনস্যুলেট। কনস্যুলার ক্যাম্প চলাকালীন ত্রিসীমানায় “অমুক আসতে পারবে তমুক আসতে পারবে না” এমন সব জিঘাংসা শর্ত কনস্যুলেটের তরফে প্রশাসনকে দেয়ার খেসারতে আখেরে কপাল পুড়েছে সেবাপ্রার্থী কয়েক হাজার বাংলাদেশির।
বহুল বিতর্কিত কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ গত ক’ছর ধরেই ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী থেকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার ইজ্জত সম্ভ্রম পায়ে মাড়িয়ে চলেছেন সযত্নে। বাংলাদেশ সাথে ইতালির সুসম্পর্ক জোরদার তো দূরের করার কথা, উল্টো সম্পর্ক বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে মিলান কনস্যুলেট। করোনাকালে ভয়াবহ দুঃসময়ে উত্তর ইতালি যখন মৃত্যু উপত্যকা তখন তোরিনো শহরে স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাস্ক ছাড়াই কমিউনিটিতে পুরষ্কার দেয়ার নামে কনসালের ওপেন তামাশা তোরিনোর প্রশাসন নেতিবাচক হিসেবে নেয়। ডয়েচে ভেলের খালেদ মুহিউদ্দিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিলান প্রবাসীদের পড়াশোনার মান নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে প্রকারান্তরে তাঁদেরকে অশিক্ষিত মূর্খ এই টাইপের কিছু বুঝাতে চেয়েছে কনসাল।
মিলান কনস্যুলেটের অপকর্মের কেঁচো অনলাইনে খুঁড়তে গিয়ে কনসাল জেনারেলের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন ইতালির সুপরিচিত দেশপ্রিয় নিউজের সম্পাদক সোহেল মজুমদার শিপন। দুই সন্তান সহ তাঁর পাসপোর্ট মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছে আজ অবধি। অযোগ্য অকর্মন্য দুর্নীতিবাজ কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ অবশ্য প্রায়শই অনেকের কাছে বলে থাকে,”লিখে বা বলে কেউ কোনদিন তার কিছু ছিড়তে পারেনি, পারবেও না কোনদিন”৷ কলংকিত এই কূটনীতিক(!) ইদানিং খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের নিজস্ব লোক এমন প্রচারও করাচ্ছে পালিত দালাল সিন্ডিকেট দিয়ে। মিলানে নতুন কনসাল নিয়োগ দিয়ে গত এক বছরে দুই দফায় ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত হলেও তা ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শহরে ভুক্তভোগী প্রবাসীরা তাই জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রবাসবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, কারণ তাঁরা এখনো আশাবাদী।
🇮🇹 মাঈনুল ইসলাম নাসিম, অনলাইন এক্টিভিস্ট।
Leave a Reply