শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

ইলিয়াস আলী নিখোঁজ : নতুন তথ্য দিলেন মির্জা আব্বাস

আমাদের সময়
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ৬০৫ বার

সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিএনপির মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে আজ শনিবার ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় মির্জা আব্বা এ কথা বলেন। ‘সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনী-ঢাকার উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুবদলের সাবেক সহসভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন বিএনপির অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল এবং নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক সাহসী নেতা। এখানে আমাদের দলের মহাসচিব আছেন, তাকে বলতে চাই, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাইশগুলো রয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সাথে তার বাকবাতিণ্ডা হয়, ইলিয়াস খুব গালিগালাছ করেছিল তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনো আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতারিত করতে না পারি সামনে এগুতে পারবেন না কোনো অবস্থাতেই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ছাত্র নেতাদের সাথে ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমার সাথে সম্পর্ক, যেটা আজ বিদ্যমান। ভালোবাসার ছাত্র নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলী ছিল অন্যতম। ইলিয়াস যে রাতে গুম হয় ওই রাত দেড়টা পৌনে ২টার দিকে খবর পাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ করি তারা আমাকে জানায়, তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে থেকে নেওয়া হলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই খবরটা আপনারা (উপস্থিত নেতৃবৃন্দ) জানেন না। সেই গাড়ীতে যে কয়জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিল তাদের আজও পাওয়া যায়নি। যেহেতু ইলিয়াস আলীর গাড়ী চালককেও পাওয়া যায়নি। তাহলে এই কাজটি করল কে?’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা কিন্তু সামনের লক্ষণ ভালো দেখছি না। ইলিয়াসকে গুমের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব লংঘিত হতে যাচ্ছে। আমি বারবার বলি নেতৃত্ব শূন্যতা। হিসেব করে দেখেন একটা একটা করে রাজনৈতিক দল শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এখন চলছে হেফাজত। বিএনপির ওপর নির্যাতন তো চলছেই। একটা সময় আওয়ামী লীগকেও শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আমি ধরে নিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি; তাহলে গুম করল কে? আমাদের একজন নেতা সালাহউদ্দিনকে পাচার করে নিয়ে গেল, চৌধুরী আলমকে গুম করা হল, আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এটা কিন্তু বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পূর্ব আলামত।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বেঁচে থাকি কি না জানিনা, দেখবেন সামনে আরও ঘটনা ঘটবে। গণমাধ্যমে খবরে দেখলাম প্রত্যেক থানা সামনে মেশিনগান ফিট করেছে, বালু বস্তা দিয়ে বাংকার করা-এসব কিসের আলামত? কাকে মারার জন্য এসব লাগবে? ব্রিটিশ সরকার একটি লাঠি দেওয়ার আগে চিন্তা করে সেখানে বাংলাদেশে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর আদলে পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। একটু হিসেব করার ব্যাপার বুঝি চলে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একটি প্লাটুনে মাত্র একটি এলএমজি ছিল। আজকে প্রত্যেক থানার সামনে এসব মেশিনগান। এটা নাকি পুলিশকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। যেখানে পুলিশ জনগণকে সুরক্ষা দেবে, সেখানে পুলিশের সুরক্ষা এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগে। পুলিশকে আক্রমণ করতে যাবে। যেখানে পুলিশের অত্যাচারে আমরা পাগল হয়ে গেলাম। এটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। এখন যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা ইলিয়াস আলী গুমের সূত্র ধরে।’

বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলী রাজধানী থেকে নিখোঁজের পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন পরিবার। এখন পর্যন্ত আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সমাধান পায়নি তাদের পরিবার। পরিবার জানে না কোথায় আছেন ইলিয়াস আলী ও আনসার আলী।

বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও তার গাড়িচালক ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে বেআইনিভাবে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়া ইলিয়াস আলীর মুক্তির জন্য তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।

ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে-স্ত্রীর এই অভিযোগের পর, ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সরকারকে তা জানাতে বলেন আদালত। স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত ১০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাবও দিতে বলা হয়।

এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং হাইকোর্টও এ বিষয়ে কোনো পক্ষের শুনানি গ্রহণ করেননি। ফলে বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনার রুশদির লুনার আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো দাবি করেছে তারা ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি। তাই হাইকোর্টে ইলিয়াস আলীর শুনানির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এ কারণেই এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি তার স্ত্রী।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!