বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় ও করণীয়

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১
  • ৪৮৪ বার

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, জাহিলীযুগে বছরে দুটি দিবস ছিল যেখানে তারা খেল-তামাশা করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন, তিনি বললেন, «তোমাদের দুটি দিবস ছিল, যাতে তোমরা খেলতে। আল্লাহ তায়ালা ওই দুটি পরিবর্তন করে তোমাদের জন্য উত্তম দিবস দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবস।( নাসায়ি) অতএব কাফিরদের ঈদে অংশ নেয়া বৈধ নয়। ঈদ – ইবাদত ও খুশি-আনন্দ প্রকাশ এবং বৈধ খাদ্য গ্রহণের মাঝে সমন্বয় ঘটিয়েছে। এ কারণেই ঈদ খুশি-আনন্দ ও খাওয়া দাওয়ার পর্ব। তবে ঈদের দিন এমন কোনো গর্হিত কাজ করা যাবে না, যা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের সাথে মিলে না। যেমন নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ। নামাজ থেকে গাফেল হওয়া। হারাম পানীয় গ্রহণ করা। হারাম খেলায় মেতে উঠা এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ যা হারামের আওতাভুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা ঈদের দিন একটি নামাজ বিধিবদ্ধ করেছেন, যার নাম ঈদের নামাজ। এ নামাজটি হলো ঈদের প্রধান কাজ। ঈদের নামাজের হুকুম ঈদের নামাজ ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বরং তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকেও ঈদের নামাজে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি হায়েযগ্রস্ত নারীদেরকেও ঈদের মাঠে নিয়ে যেতে বলেছেন, যদিও তারা নামাজ পড়বে না। ঈদের নামাজ ওয়াজিব হওয়ার দলিল: আল্লাহ তায়ালার বাণী: {অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং নহর কর} [সূরা আল কাউছার:২] 1. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ, যা উম্মে আতিয়া রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে পাই। উম্মে আতিয়া রা. বলেন,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় নারীদেরকে বের করে নিয়ে যেতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন: অর্থাৎ যুবতী, হায়েযগ্রস্ত ও কিশোরীদেরকে। তবে হায়েযগ্রস্তরা নামাজ থেকে বিছিন্ন থাকবে। তারা এ ভালো কর্ম ও মুসলমানদের দোয়ায় হাজির হবে।

ঈদের নামাজ আদায় পদ্ধতি

১. ঈদের নামাজ দু রাকাত, যাতে আযান ইকামত নেই। ঈদের নামাজের কিরাত প্রকাশ্যে পড়তে হয়।ঈদের নামাজ আদায় পদ্ধতি হলো নিম্নরূপ: ২. প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা, ছানা পাঠ, আউযুবিল্লাহ পাঠ ও কিরাত পড়ার পর তিন তাকবীর দেবে। ৩. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়ে এর সাথে অন্য একটি সূরা মিলাবে। সুন্নত হলো সূরা ফাতিহার পর সূরা আল আ»লা পড়া। আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল গাশিয়া পড়া। অথবা প্রথম রাকাতে সূরা ক্বাফ পড়া ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল কামার পড়া। ৪. দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দেবে। প্রতি তাকবীরের সাথে হাত উঠাবে। ৫. তাকবীরগুলোর মাঝে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়বে। ৬. সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করার পর ইমাম মিম্বারে উঠবে। দুটি খুতবা দেবে। এ দুটির মাঝে সামান্য সময়ের জন্য বসবে। প্রথম খুতবা নয় তাকবীরের সাথে শুরু করবে। আর দ্বিতীয় খুতবা সাত তাকবীরের সাথে শুরু করবে। ৭. ঈদুল ফিতরে মুস্তাহাব হলো মানুষদেরকে সদকায়ে ফিতর সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া। আর ঈদুল আযহায় কুরবানীর হুকুম আহকাম বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া। ঈদের নামাজ আদায়ের জায়গা ঈদের নামাজ মসজিদে নয় বরং মাঠে পড়া সুন্নত। প্রয়োজনে যদি মসজিদে পড়া হয় তবে কোনো সমস্যা হবে না।

ঈদের নামাজের মুস্তাহাবসমূহ ১. ইমাম ব্যতীত অন্যান্য মুসুল্লীরা সকাল সকাল ঈদগাহে আসবে এবং প্রথম কাতারের দিকে আগাবে। ২. যদি সম্ভব হয় তাহলে পায়ে হেঁটে এক পথে যাবে এবং অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবির রা. বর্ণনা করে বলেন, «ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার রাস্তায় পার্থক্য করতেন।( বুখারী শরীফ) ৩. ঈদুল ফিতরের নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া (তিনটি অথবা পাঁচটি)। আর ঈদুল আযহায় নামাজ থেকে ফিরে আসার পূর্বে কিছু না খাওয়া| ঈদুল ফিতরের নামাজ দেরিতে আদায় করা মুস্তাহাব; যাতে মানুষ সদকায়ে ফিতর আদায় করতে ও হকদারদের কাছে তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামাজ সকাল-সকাল আদায় করা মুস্তাহাব|

দুই ঈদের আহকাম

১. ঈদগাহে, ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে, নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। কিন্তু যদি ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করা হয়, তাহলে মসজিদে প্রবেশের সময় তাহিয়াতু মসজিদ পড়া শুদ্ধ রয়েছে।

২. যে ব্যক্তির ঈদের নামাজ পুরোটা বা অংশত ছুটে গেল তার জন্য সুন্নত হলো ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অবলম্বন করে তা কাযা করে নেয়া। অর্থাৎ অতিরিক্ত তাকবীরসহ দু রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করা। যে অংশ ছুটে গেল সে অংশও ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অনুসরণ করে আদায় করে পূর্ণ করে নেয়া।

৩. রমজান শেষে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের উপর তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার বিধান রেখেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- {আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর।( সূরা বাকারা-১৮৫)

৪. উক্ত আয়াতে, তুকাব্বিরুল্লাহা» এর অর্থ তোমরা যেন তোমাদের হৃদয় থেকে এবং জিহ্বা দিয়ে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করো। নিম্নবর্ণিত শব্দমালা দ্বারা ঈদের মুহূর্তে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা তথা তাকবীর দিতে হয়, “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা- ইলাহা——-”

৫. পুরুষদের জন্য উঁচু আওয়াজে তাকবীর দেয়া সুন্নত। আর নারীরা দেবে গোপনে। কেননা নারীদেরকে আওয়াজ নিচু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৬. তাকবীর শুরু হবে ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর থেকে তাকবীর শুরু হবে যদি পরদিন ঈদ হবে বলে সূর্যাস্তের পূর্বেই নিশ্চিত হওয়া যায়, যেমন রমজান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হয়ে গেল অথবা ঈদের চাঁদ উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল।

কিছু দিকনির্দেশনা ১. ঈদের সময় মুসলমানদের মাঝে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় মুস্তাহাব।

২. ঈদে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও মুসলিম ভাই বেরাদরকে শুভেচ্ছা বিনিময়ও মুস্তাহাব। ৩. ঈদ একটি সুযোগ, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং যাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়ার সর্বোত্তম সময়। ৪. ঈদে কবর যিয়ারত বাধ্যতামুল নয়। তবে, আলেমদের মধ্যে তা নিয়ে, (মত পার্থক্য) আছে। ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার ও কাপড় চোপড় ও বৈধ বিনোদনের ব্যবস্থা করা জায়েয। ঈদ হলো খুশি-আনন্দের উপলক্ষ। আল্লাহ তায়ালা আনন্দ প্রকাশকে নিষিদ্ধ করেননি। ইরশাদ হয়েছে: {বল, «আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়»। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। (সূরা ইউনুছ) কাফিরদের ঈদ-পর্বে শুভেচ্ছা জানানো মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়; কেননা এর দ্বারা কুফরের নিদর্শনকে মেনে নেয়া হয়। কাফিরদের ঈদ-পার্বনের স্থানসমূহে গমন এবং তাদের আনন্দে অংশ নেয়া বৈধ নয়।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির,

ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক,গবেষক ও ধর্মীয় টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক, কুমিল্লা।

01718-228446

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!