বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার কারাগারে বন্দি নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল

যুগান্তর
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১
  • ২৯৩ বার

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দিকে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ৫ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিও শনিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়- কারাবন্দি শাহজাহান বিলাসকে মেঝেতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। এ সময় তাকে ঘিরে কয়েকজন কারারক্ষীকে দেখা যায়। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার জন্য দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া নির্যাতনের ভিডিও ধারণ ও প্রকাশ করার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কারা সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরার দুর্গাপুর গ্রামের আবদু মিয়ার ছেলে শাহজাহান বিলাস ডাকাতি ও হত্যা মামলার ৫৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২৬ বছর ধরে কুমিল্লা কারাগারে তিনি বন্দি রয়েছেন। সম্প্রতি ১২ পিস ইয়াবাসহ তিনি কারারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর কেস টেবিলে ডেকে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়-জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বিলাসের দুই হাত বেঁধে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসাও দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়ার পর বন্দি নির্যাতনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এরপর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিফুল ইসলাম খান।

সদস্যরা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন ও ফেনী জেলা কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন মিঠু।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসাদুর রহমান বলেন, বন্দি বিলাসকে বেধড়ক পেটানো হয়নি। ১৬ এপ্রিল বন্দির কক্ষ তল্লাশি করে মাদক পাওয়া যায়। পরদিন তাকে আলাদা সেলে পাঠানো হয়। সেল পরিদর্শনে গেলে বিলাস জানায়-তিনি আর এ সেলে থাকতে পারবেন না। অন্য বন্দি ও কয়েদিদের মতো করে তাকে রাখা হোক। এরপর ১২ মে তাকে কেস টেবিলে আনলে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেন। আসাদুর রহমান আরও বলেন, ওই সময় সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই বন্দি বিলাস নিজের মাথা দিয়ে লোহার দরজায় আঘাত করেন। নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হলে তিনি আরও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন। পরে তাকে রক্ষীরা লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে বিলাসের গায়ে বড় কোনো আঘাত লাগেনি বলেও তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, এক বছর ধরে কারাগারে মাদক সেবনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ সময় সহকারী প্রধান কারারক্ষী তরিকুল ইসলামকে ৫২২ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি জেলে আছেন। তরিকুলসহ আরও কয়েকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

শাহজাহান আহমেদ আরও বলেন, ভিডিওতে দেখবেন বিলাসকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়নি। আমরা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। এ ছাড়া যে দুজন কারারক্ষী তাকে পিটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্য তিন কারারক্ষীকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে যারা মাদকসংশ্লিষ্টতায় চাকরি হারিয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা (তিন কারারক্ষী) সিসিটিভির ফুটেজ বাইরে পাঠিয়েছেন। এটা জেল কোডের লঙ্ঘন। এ কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বন্দি নির্যাতনের ঘটনায় সহকারী প্রধান কারারক্ষী শাহনেয়াজ আহমেদ ও কারারক্ষী দিদারুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভিডিও বাইরে পাঠানোর অভিযোগে কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, অনন্ত চন্দ্র দাশ ও চরণ চন্দ্র পাল সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এদিকে, বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা শুনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কারারক্ষী অনন্ত। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!