কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখায় প্রধান সন্দেহভাজন যুবকের পরিচয় পেয়েছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাকে গ্রেপ্তার করতে গত কয়েক দিন ধরে চলছে জোর অভিযান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন (৩০)। তিনি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, কোরআন শরিফটি রাখার পর হনুমানের মূর্তির গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সময়টি রাত তখন সোয়া ৩টার মতো।
পুলিশ বলছে, ইকবালের সহযোগী হিসেবে অন্তত চারজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, ইকবাল গ্রেপ্তার হলেই এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান। রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কোনো একসময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।
ইকবালের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইকবাল সবার বড়। ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করেন। ১০ বছর আগে তিনি জেলার বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ইকবালের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তারপর ইকবাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে আরেকটি বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
আরও জানা যায়, ইকবাল নেশা করে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করত। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াত। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতেন। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল।
উল্লেখ্য, দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
Leave a Reply