মাসুক আলতাফ চৌধুরী। কুমিল্লা বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা, আবার শুরু কবে কুমিল্লা বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করে না। ১৯৭৬ সাল থেকে বন্ধ, বাণিজ্যিক দেশে চলাচল- আভ্যন্তরীণ বিমান। এরপর প্রশিক্ষণসহ সামরিক বিমান চলাচল ছিল। ১৯৮৬ তে তাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিমানবন্দর সচল-চালু আছে। আয়ও করছে। আন্তর্জাতিক রুট- আকাশপথের সিগনাল থেকে মাসে আয় আসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০ টি বিমান সিগনাল ব্যবহার করছে। ২০ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী আছেন। তাই কুমিল্লা বিমানবন্দর বন্ধ আছে -চালু নেই বলাই সঠিক। যদিও বলা হচ্ছে পরিত্যক্ত।
১৯৯৪ সালে এটি আবার চালু হয়েছিল। যাত্রী না থাকায় দু’সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে পড়ে। এর দু’বছর পর ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা ইপিজেড শুরু হয়। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় কুমিল্লাসহ ৭টি ছোট রানওয়ে বিমানবন্দর রয়েছে। যেগুলো থেকে ছোট রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে এমন বিমান চলাচল করে। তাই এদের স্টল (STOL) বিমানবন্দর বলা হয়। সামরিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এসব বিমান বন্দর । আর এ সুবিধাতেই চলতে পারে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক ফ্লাইট। ওই ৭টির মধ্যে কুমিল্লাসহ ৫টি বিমানবন্দরে আবার বিমান ওঠানামার – বানিজ্যিক আভ্যন্তরীণ বিমান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন যাত্রী হবে এমন ধারণাই সংশ্লিষ্টদের।
কর্তৃপক্ষ মনে করছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প কারখানার পাশাপাশি পর্যটন খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ওই ৭টির কোনটিতেই বিমান ওঠানামা করে না। পর্যটন বিকাশ ও যাত্রী পরিবহন বাড়াতে এসব বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা বিমানবন্দরে সব সুবিধা রয়েছে। গণমাধ্যমে এমনই ভাষ্য বিমানবন্দর ম্যানেজারের। তাহলে জট কোথায়। শুধু সরকারি উদ্যোগ দরকার। নেভিগেশন সুবিধা, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিইচএফ সেট- এয়ার কমিউনিকেশন,যন্ত্রপাতি, ফায়ার সার্ভিসসহ স্টেশন সব সুবিধাই আছে। এখনই চালু করতে রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। আরও ২০-২২ জন জনবল লাগবে। বেশ আশার কথা।
গণমাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, কুমিল্লা অঞ্চলে শিল্পায়ন বেড়েছে। বিমানবন্দর এলাকাতেই ইপিজেড আছে। এখনও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঢাকা থেকে দ্রুত ও সহজে কুমিল্লা যেতে পারছে না। একটি বেসরকারি বিমান কোম্পানির ম্যানেজারের ভাষ্য, যখন যাত্রী হয় নি, তখনতো যানজট ছিল না। এখনও তিন ঘন্টা সময়েও ঢাকা থেকে সড়কে কুমিল্লা পৌঁছানো যায় না। অথচ বিমানে ২৫ মিনিটেই যাতায়াত সম্ভব। আর কুমিল্লা অঞ্চল বলতে- এতে চাঁদপুর ও ফেনীর সাথে ঢাকার আরও ভালো সংযোগ হবে। এখানে অপেক্ষাকৃত ছোট ১৭-১৮ আসনের বিমানগুলো চলতে পারে। এতে ১০-১১ জন যাত্রী হলেই আর লোকজন থাকে না।
বিশেষজ্ঞ মত, বাণিজ্য সফলতায় দুটো শর্ত থাকা চাই। পর্যাপ্ত যাত্রী এবং বিমান ওঠানামার দরকারি অবকাঠামো। এই দরকারি অবকাঠামো নেই বলেই দেশের ১১ টি আঞ্চলিক বিমানবন্দরের ৬ টিতেই বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী কিন্তু আছে। কুমিল্লাসহ এসব বিমানবন্দর ব্রিটিশদের তৈরি। কুমিল্লারটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত। পাকিস্তান সময়েই এগুলোতে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু। দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। চালু পাঁচটি আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর- রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, সৈয়দপুর ও কক্সবাজার। এই আটটিই সচল। প্রথমে নতুন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল যে সাতটি- কুমিল্লা, তেজগাঁও-ঢাকা, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া ও শমসেরনগর। পরে বলা হচ্ছে এরমধ্যে কুমিল্লাসহ পাঁচটি প্রথম পর্যায়ে চালু হবে। ২০৩০ সালের কর্মপরিকল্পনায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তা রেখেছে। তাই কোনটি কবে চালু হবে তা এখনও জানা যায় নি। একেকটির একেক অবস্থা। কুমিল্লায় সহজেই চালু করা যায় এমন মতামত আছে। কিন্তু সহসাই চালু হচ্ছে এমনটা জানা যায় নি।
বেসরকারি বিমান কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, পুরনো ব্রিটিশ সময়ের বিমানবন্দরগুলোর (কুমিল্লাসহ) রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছোট, মান নষ্ট হয়ে গেছে। নেই পর্যাপ্ত ফায়ার সার্ভিস সুবিধা। এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও খারাপ। পুরনো ও অব্যবহৃত থাকায় এগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। রানওয়ে বর্তমান যাত্রীবিমান চলাচলে অনুপযুক্ত।
সব মিলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিমানবন্দর রয়েছে ২৮ টি। অনেকগুলোই পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত, ব্যবহার অনুপযোগী ও নির্মাণাধীন। পুরনো সবগুলোই বিট্রিশ সময়ের। এসব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ফুট। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে, পর্যায়ক্রমে রানওয়েগুলো ছয় থেকে আট হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। তখন ছোট যাত্রীবাহী বিমান চলাচল করতে পারবে।
সব মিলে সহসাই বিমান চলাচল করছে এমনটা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিকল্পনা ও ভবিষ্যত বেশ আশাব্যঞ্জক। নড়াচড়া, কথাবার্তা বলা চলছে। পরিকল্পনায় ঢুকে গেছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। সিদ্ধান্তের পর প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের পালা। এরপর চলবে বিমান। লেখকঃ মাসুক আলতাফ চৌধুরী, সাংবাদিক , সাবেক সভাপতি-কুমিল্লা প্রেসক্লাব ।
Leave a Reply