বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০৮ অপরাহ্ন

‘গরিবের উকিল‘ বাসেত মজুমদার

রেজাউল করিম শামিম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১
  • ৪০৬ বার
এডভোকেট বাসেত মজুমদার আর নেই ভাবতেই মনটা ব্যথায় ভরে যায়।ওনার সাথে কিযে ঘনিষ্ঠা ছিলো,কি সুপ্রিমকোট চেম্বার,কি বার কাউন্সিল অফিস কিংবা বাসায় য্খানেই গেছি ওনার হাসি মুখের সম্ভাষণ মনে রাখার মতোই।সেই বাসেত মজুমদার আজ সকালেই চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্যে।
বাসেত ভাইয়ের সাথে কবে পরিচয় ঠিক জানা নেই ।পাড়ায় আমার বাসার সামান্য দূরেই আমার ঘনিষ্ঠ দু‘বন্ধু, দুই ভাই, গার্মেন্স ব্যবসায়ী হান্নান দিদার ও সিনিয়ার আইনজীবী কে এম ফয়েজের বাসা।তাঁদের বড় বোন রওশন আপাকে বিয়ে করেছিলেন বাসেত মজুমদার।আমরা তখন অনেক ছোট।তবে সেই থেকেই তিনি আমাদের দুলাভাই।
তবে ঢাকায় আসার পর পেশাগত করনেই ওনার সাথে গড়ে উঠে সখ্যতা,ঘনিষ্ঠতা হয় আরো নিবির।তিনি, আইনজীবী সংগঠনগুলোর সবগুলোর সাথেই প্রায় শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন।ফলে সেগুলোর নেতৃত্বের শীর্ষ চলে আসেন সহজেই।একথাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আমাদের দেশে সামরিক শাসন বিরোধীসহ যেকোন গণআন্দোলনেই আইনজীবীদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা। আর সেসব আন্দোলনে সবসময়ই বাসেত মজুমদার ছিলেন সামনের সারিতে-সংগঠনগুলো নেতৃত্বদানকারি হিসাবে।4 জন লোক এবং লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে-এর একটি ছবি হতে পারে
বাসেত মজুমদার ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি থেকে শুরু করে, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের সর্বোচ্চ পদ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার।সঙ্গত কারনেই দেশের বিভিন্ন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ওনার প্রতিক্রিয়া,মন্তব্য কিংবা সাক্ষাৎকারের জন্যে ওনার কাছে যেতে হয়েছে অনেকবার।শত ব্যস্থতার মধ্যেও তিনি সময় দিয়েছেন সবসময়ই। এর বাইরেও ওনার কাছে গেছি কুমিল্লার নবীন আইনজীবী,যারা এ্যন্ডোলম্যন্ট পরীক্ষা দিয়ে চুড়ান্ত অন্তভূক্তির অপেক্ষায় থাকেন -তেমনি অনেকের সুপারিশ নিয়েও গেছি ওনার কাছে।কখনই তিনি ফিরিয়ে দেননি।আমার কথা রেখেছেন।
অন্যদিকে, হাইকোটের মতো উচ্চ আদালতে ব্যয়বহুল বিচার প্রার্থীদের,যারা আর্থীকভাবে দূর্বল তেমনি অনেককেই নিয়ে দ্বরস্থ হয়েছি ওনার কাছে।উনি নামমাত্র ব্যায়ে সেসব মামলা লড়েছেন,প্রতিকার পাইয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।এমনি ঘটনা শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয় ।সারদেশ থেকেই ওনার জুনিয়রদে বা সরাসরি কিংবা রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মাধ্যমে ওনার কাছে যারাই গেছেন,তারই উপকার পেয়েছেন।এমনি ঘটনা ঘটেছে বছরের পর বছর।যার জন্যে ওনার নাম হয়ে গিয়েছিলো ‘গরিবের উকিল‘।বাসেত মজুমদার, সামাজিক ক্ষেত্রে অর্থ ব্যায় করতেন অকাতরে।ময়মনসিংহে তিনি গড়ে তুলেছেন ওনার নামে বেশ বড় একটি মাদ্রসা কমপ্লেক্স।এমনি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছে তার নিজ এলাকা লাকসামসহ বিভিন্ন স্থানে।ওনার ব্যক্তিগত আর্থীক অনুদান নেই, দেশের তেমনি কোন বার সমিতি পাওয়া যাবেনা।
এমনি মানবিক বাসেত মজুমদারের জানাজায় আজ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ওনার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা,ভালোবাসার প্রমান।প্রথা অনুযায়ী সুপ্রিমকোট সমিতির অঙ্গনেই প্রয়াত খ্যতিমান আইনজীবীদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । কিন্তু, আজ জোহর নামাজের পর বাসেত মজুমদারের জানাজায় স্থান সন্কুলান না হওয়ায়,ঢাকা দক্ষিন সিটি মেয়র ব্যরিষ্টার ফজলে নুর তাপসের ব্যবস্থাপনায় জানাজা জাতীয় ঈদগা মাঠে জানাজার নামাজ স্থানান্তর করতে হয়।সেখানে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক,প্রধান বিচরপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন,এ্যটর্ণী জেনারেল আমিন উদ্দিন,বসেত মজুমদারের ছেলে এডভোকেট সাঈদ আহাম্মদ রাজা বক্তব্য রাখেন।তাছাড়া পশু সম্পদ মন্ত্রী সম রেজাউল করিম, রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন,সুপ্রিম কোটের বিচাপতিগন,মেয়র ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপসসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ জানাজায় অংশ নেন।7 জন লোক, লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে এবং আউটডোর-এর একটি ছবি হতে পারে
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দেয়া হয়।
আমি এর আগেও সুপ্রিমকোটের প্রঙ্গনে অনেক খ্যাতিমান আইনজীবীর জানাজায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু বাসেত মজুমদারের জানাজার মতো এত লোকের উপস্থিতি দেখিনি।সেখান থেকে ওনার লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি সাঁনিচৌ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আর এক দফা জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে ওনাকে দাফন করা হয়।আর এর মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটে একজন মানবিকগুনাবলির আইনজীবীর।আল্লাহ্ ওনাকে বেহস্থ দান করুন।
লেখকঃ রেজাউল করিম শামিম, সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাব, সাবেক সভাপতিঃ কুমিল্লা প্রেসক্লাব

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!