রামগঞ্জে কামরুজ্জামান শুভ নামে ছাত্রদলের এক কর্মী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবদুর রহমান বাচ্চুর ছেলে কামরুজ্জামান শুভ নিজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতি করেন। কয়েক মাস পূর্বে শুভ দল পালটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালান। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে পাত্তা না দেওয়ায় তিনি তার ব্যবসার সুবিধার্থে ১ মার্চ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদটি বাগিয়ে নেন। এরপর শুভ এলাকায় দান-অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে ব্যানার করে নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিলেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে শুরু হয় ক্ষোভ।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘শুভ আমাদের কাছে অনেকবার এসেছেন যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য করার জন্য। আমরা জানি সে অতীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার বাবা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। তার পরিবারের লোকজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই আমরা তাকে সদস্য করতে পারি নাই। হঠাত্ দেখি পোস্টার-ব্যানার দিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা প্রচার করতে। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার এবং দুঃখ্যজনক।’
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান রিপন বলেন, ‘আমি উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি থাকাকালীন কামরুজ্জামান শুভ ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিল। তার বাবা এখনো আমাদের দলের কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। এখন সে নাকি অনলাইন কেসিনো খেলে অনেক টাকা করেছে, তাই ছাত্রলীগের সঙ্গে চলাফেরা করে।’ কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন কামরুজ্জামান শুভ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।’
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহম্মেদ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সৈকত মাহমুদ সামছু, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল হাসান ফায়সাল মাল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শুভসহ অনেকই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে আওয়ামী পরিবারগুলোর ওপর পাশবিক নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি করা লোকেদের আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এতে যারা জেল-জুলুম-হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে থেকেছেন, নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেই নেতারা বাদ পড়ে যান। তারা শুভকে বহিষ্কারের দাবি করেন। অন্যথায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ তার বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধনসহ কর্মসূচি দেবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান শুভ বলেন, ‘আমার বাবা একসময় বিএনপির সমর্থক ছিলেন এটা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জানে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কমিটিতে আছেন কি না, এটা আমার জানা নাই। আমি ২০১১ সালে ছাত্রলীগের ডোনার ছিলাম। কেন্দ্র সব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে আমাকে সদস্য করেছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম রুহুল আমিন বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা দলের জন্য অশুভসংকেত। যে কখনো আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতি করে নাই, যার অতীত বিএনপি, সে কীভাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য হয়? আমাদের কেউ একটু জিজ্ঞাসাও করল না। এটা খুবই দুঃখ্যজনক।’
এদিকে কামরুজ্জামান শুভকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী আলোচনাসভা শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর গণস্বাক্ষর করেছেন।
শুক্রবার মোহাম্মদীয়া হোটেল পার্টি সেন্টারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহম্মেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু, লক্ষ্মীপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তার শিউলিসহ উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১০ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সাত ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার ৮ কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ড. সেলিম মাহমুদ
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যসচিব এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘উপকমিটির সদস্য করার ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে কামরুজ্জামান শুভকে আমি চিনতাম না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সহসভাপতি মাজহার শামীম ও ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলামের সুপারিশে তাকে উপকমিটির সদস্য করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে, ছাত্রদল নয়, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহসভাপতি ছিলেন কামরুজ্জামান শুভ। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। মাজহার শামীম ও রবিউল ইসলাম তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন।’
এ ব্যাপারে ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে মাজহার শামীম ও রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, কামরুজ্জামান শুভ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হওয়ার পর এলাকায় ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন। এতে এলাকায় প্রভাবশালী নেতারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন।ইত্তেফাক
Leave a Reply