বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

পরিবারিক শিশু নির্যাতন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৩৯৮ বার
ডাঃ ইকবাল আনোয়ার

ডাঃ ইকবাল আনোয়ার ঃ শিশু চিকিৎসক হিসাবে জীবনের এ প্রান্তে এসে, চারটি কথা বলবো-

১. শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না।
২. শিশুর সামনে ভায়লেন্স, ঝগড়া/ জোরে কথা বলবেন না।
৩. শিশুকে মিথ্যা বলবেন না, শিশুর সামনে মিথ্যা বলবেন না।
৪. শিশুকে ভয় দেখাবেন না!

সারা বিশ্বে, তৃতীয় বিশ্বে, বাংলাদেশে শিশুদের অনেক ব্যথা। সংসারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, যুদ্ধ, অমানবিক আচরন, ক্ষুধা, অনাদরে তারা মুহ্যমান।
তাদের অনেকের বাবা বিদেশে চাকুরী করে দেশে টাকা পাঠায়। আমরা ফুটানী করি। এ সব রিমিটেন্স বীরেরা দেশে আসলে সম্মানের পরিবর্তে হয়রানী ও অপমানের শিকার হন। বড় লজ্জা! তাদের সন্তানেরা পিতৃ আদর বঞ্চিত। এ সব শিশুরাও বীর।

শিশুরা বড়দের আচরনের অহেতুক ভুক্ত ভোগী।
তারা উচ্চ রবে কাঁদে, মনে মনে কাঁদে।
তাদের কান্না খোদার দরবারে ঝুলে আছে!

উপরের চারটি কথা, পারিবারিক শিশু নির্যাতনের সংজ্ঞায় পড়ে।
উন্নত বিশ্বে শিশুকে জোর করে খাওয়ালে, ধমক দিলে, তাদের সামনে ভায়লেন্স করলে, ঝগড়া বিবাদ করলে, নির্যাতন করলে দস্তুর মতো পুলিশ আসে!
রাষ্ট্র তাদের নিয়ে যায়, যদি তারা পরিবারে বড় ভায়লেন্স বা নির্যাতনের শিকার হয়, পরিবারের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা রজু হয়।

শিশু খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকে কেনো!
যে কোন যুক্তিতে তার উত্তর হলো, তার খেতে ভাল লাগছেনা। আপনি আর আমি বলবো, কী বলেন, তার পেটে ক্ষিধা! সে সাত দিনের মধ্যে কিছু খায় নি, দেখছেন না সে কতো রোগা! তার বয়সের একটা বাচ্চার কি শরীর এ রকম কাঠি কাঠি থাকে! তার উদাহরণও দিলেন! তমুকের বাচ্চা কেমন গবাগব খায়! এ রকম কথা শিশুটির সামনে, তাকে শুনিয়ে বলাটা, আমার মতে, যদি আমার ক্ষমতা থাকতো তবে বলতাম, ফৌজদারী অপরাধ( কথার কথা), কেননা আপনি জানেন কি, এতে তার মগজের কতো খানি ক্ষতি করলেন? যা কোনদিন পূরণ হবে না! অথচ আপনি শিশুর এত বড় ক্ষতি করেও তার মা! আশ্চর্য! অনেক পিতা শিশুর উপর মায়ের দৈনিক এ নির্যাতনে কতো কষ্ট পায়! নিরবে কাঁদে। কিন্তু কিছু বললেই মা হয়ে যান অগ্নিশর্মা- ‘ তুমি পেটে ধরোনি তো! কি বুঝবে, তোমার কারনেই এমন হয়েছে।
আহারে বাচ্চাটা আমার কি হয়ে গেলো।’ সত্যই আপনি বড় ক্ষতিকর। তা না হলে, উন্নত বিশ্বে, এমন আবস্থায় মা থেকে কি খামখা শিশুকে আলাদা করে নেয়া হয়!

যুক্তি কি বলে?একটা শিশুর ক্ষুধা লেগেছে, তাকে খাবার দেয়া হচ্ছে, অথচ খাচ্ছে না, এ জগতে এমন হতে পারে! আপনি অসুস্থ মা। আপনি মানসিক ভাবে ভোগছেন।
বলবেন, তবে খায় না কেনো? হ্যাঁ। এতক্ষনে বলেছেন কথা একটা। আরো বলতে পারেন, অমুকের বাচ্চা কি সুন্দর দিলেই খায়, কেনো?
এ রহস্য বুঝার জন্য, এ বিজ্ঞান বুঝার জন্য, সতন্ত্র একটা লেখা লিখতে হবে। লিখবো ইনশাল্লাহ। তবে তার আগে আজই জোর করে খাওয়ানো বন্ধ করুন। কেনোনা, আপনার সাথে শিশুটির সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এমনিতে সে খেলা করে, দৌড়ায়, হাসে, মজা করে! কিন্তুু খাবারের কথা এলেই তার মন কেমন হয়ে যায়। এটা এমন হচ্ছে যে, যেনো একটা মানুষকে দৈনিক তিন চার বেলা চাবুক মারা হচ্ছে।
আপাতত হাসি মুখে তার সাথে খাবার নিয়ে বসুন। যেখানেই সে খাবে না বলছে, সেখানেই হাসি মুখে তা রেখে দিন। সপ্তাহ খানেক বা দিন পনেরো এমন করে দেখুন। ্

আমাদের দেশে সংসদে,সমাজে, ঘরে, নগরে, বন্দরে, শহরে, শিশু প্রায় অনুল্লেখ্য একটা আদরের পুটলি মাত্র। বড় মনে করেন, শিশু বুঝেনা। তাকে খেলতে দিলেই হলো। আগে খাইয়ে ঘুম পাড়ালেই দায়িত্ব শেষ।

কিন্তুু না। শিশুরা সবচে বড় শিল্পী, সবচে বড় বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানীতো বটেই, তারা সবচে বড় দার্শনিক। তার বড়দের ছোট সংস্করণ নয়। তারা সতন্ত্র সম্মানিত পরিপূর্ন।
যে দেশে যত লাইব্রেী, যে দেশে শিশু যত গুরুত্ব পায়, সে দেশ তত উন্নত। এটাই অধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানে দেশের উন্নয়ণের সূচক। শিক্ষা নিয়ে শিশুদের গিনিপিগ বানানো, বড় নির্মম ও হতাশাজনক। এবং অন্যায়। এটাও শিশু নির্যাতন। শিশুদের জন্য বরাদ্ধ, শিশুদের নিয়ে সংসদে মর্যাদাজনক আলোচনা, পরিকল্পনা ও ভাবনা জাতিকে এগিয়ে নেবার প্রধান নিয়ামক।
শিশু রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি করে না, অথচ ক্ষতির নির্মম শিকার।

আমাদের দেশে আমরা শিশুদের আদর করতে কম করি না। তবে শিক্ষিত সমাজে, বিশেষ করে অনেক শিক্ষিত মায়ের কাছেই শিশু নির্যাতনের শিকার হয়।
এ সব মায়েদের আমি টিটকারী করে বলি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে এম এ পাশ মা! কেনোনা, তারা আমার পরামর্শের উপর দিয়ে আমাকে পরামর্শ দেন।

এখন যে কথাটি বলবো, তা শোনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আমি কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে কাজ করার সময়, প্রবাসী এক সুন্দরী নারী, যার কাছে সুগন্ধের ত্যাজে যাওয়া যাচ্ছিলো না, তার দুই হাতের দশটি আঙ্গুলে ছিল দশটি আংটি, তার শিশুটি ছিলো অবেস, অর্থাৎ বিএমআই মতে চরম মোটা, মহিলার কমপ্লেন ছিলো, তার বাচ্চা না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি এ ক্ষেত্রে কি করেছিলাম, সেটা থাক।

শুনতে অবাক লাগবে, মায়ের এ ধরনের অত্যাচার থেকে শিশুকে বাঁচাতে কোনো এক উন্নত দেশে নাকি শিশুর একটি অপারেশন করে দেয়া হয় । যাতে নল দিয়ে মা শিশুকে সরাসরি পেটে খাওয়াতে পারেন। যদিও এটি চরম ব্যতিক্রম। তবুও এ আচরণের ভয়াবহতা অনুধাবনের জন্য এ উদাহরণ টানলাম।

শিশুর জন্য মাতৃজটর থেকে শুরু করে প্রথম দুই বছর, কিছুটা হলেও ছয় বছর পর্যন্ত সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়েই তার মস্তিষ্কের কোষ পরিপুষ্ট হয়। এ সময়ের বিরূপ আচরনের প্রভাব সারা জীবন সে ভোগ করে।

আজ যে শিশু, সমাজের সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়েছে, মাদকাশক্তি তার সকল শক্তি কেড়ে নিয়েছে, মা বাবার কথা সে শুনছে না, কু আচরন করছে, নিজেরা ভায়লেন্স করছে, বেয়াদপী করছে, জঙ্গী হচ্ছে, পিটিয়ে সহপাঠিকে মেরে ফেলছে, এর প্রায় সবটা ঐ দুই বছরে তার সঙ্গে আচরিত ঘটনার ফল!

শিশু আনন্দ চায়, দুঃখ চায় না, পরিবারে মেলবন্ধন চায়, ঝগড়া একদম পছন্দ করে না। মিথ্যা সে সহ্য করতে পারেনা।

শিশুরা শুদ্ধ মানুষ। আমরা বাজে মানুষ।

অন্তত, পারিবারে, বুঝে না বুঝে, নিরবে সরবে, ক্রমাগত ভাবে চালিত শিশু নির্যাতন বন্ধ হোক।

আজকের শিশুই কালকের যুবা। তারা দেশ চালাবে। তারা যেনো সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠন করে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!