শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

প্রবাসী(রেমিট্যান্স) আয়ে সুবাতাস

পূর্বপশ্চিমবিডি
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২০৫ বার

বাড়তি প্রণোদনায় ডলারের দাম বেশি পাওয়ায় বৈধ পথে বেড়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মা‌সে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৯৭ কোটি ডলার। এই অংক গত তিন মা‌সের স‌র্বোচ্চ।

বুধবার (১ ন‌ভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈ‌দে‌শিক মুদ্রার সংকট কাটা‌তে লোকসান দি‌য়ে বেশি দা‌মে ডলার কিনতে পারছে ব্যাংকগু‌লো। প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার স‌ঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছে। ফ‌লে বৈধ প‌থে দেশে রে‌মিট্যা‌ন্স আসছে। যার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।

ত‌বে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না। এছাড়া মধ্যপ্রা‌চ্যের দেশ ওমান বাংলা‌দে‌শ থে‌কে শ্র‌মিক নে‌বে না ব‌লে ভিসানী‌তি দি‌য়ে‌ছে। রাজ‌নৈ‌তিক সংকটসহ বেশ কিছু কার‌ণে আ‌রও কিছু দেশ থেকে এ ধর‌নের ভিসা নী‌তি আস‌তে পা‌রে। ফ‌লে আগামী‌তে প্রবাসী আ‌য়ের এ ই‌তিবাচক ধারা অব্যাহত না থাকার শঙ্কা র‌য়ে‌ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অ‌ক্টোব‌র মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং -সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, সরকারের আড়াই শতাংশের সঙ্গে আরও বাড়তি আড়াই শতাংশ ডলার রেট বেশি দেবে। সবমিলিয়ে রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবে- এ ধরনের পদক্ষেপ সাময়িক সময়ের জন্য রেমিট্যান্স বাড়াবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান হবে না।

ড. সেলিম রায়হান জানান, রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে হন্ডি বন্ধ করতে হবে। আর হুন্ডি বন্ধ করতে হলে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। এখন প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে এটা যে কোনো উপায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি জানান, ব্যাংকগুলো যত বেশি প্রণোদনা দেবে হুন্ডির লোকজন তার চেয়ে বেশি প্রণোদনা দেবে। তাই হুন্ডি যতক্ষণ পর্যন্ত রমরমা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ পথে আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসবে না।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে কমেছিল। ডলার সংকটের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকেই সংগঠন দুটি মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন।

বর্তমানে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ ন‌ভেম্বর থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে ১১১ টাকায় বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা। এত দিন ১১০ টাকায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!