বিএনপির এক নেত্রীর করা কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দলের চট্টগ্রাম নগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। পেশায় চিকিৎসক শাহাদাতকে সোমবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার ট্রিটমেন্ট হাসপাতালের চেম্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শাহাদাত হোসেন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, আজ সোমবার দুপুরে চকবাজার থানায় শাহাদাতের বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে এক ভদ্রমহিলা এজাহার দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিকালে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলার বাদী লুসি খান নামের এ চিকিৎসক নগর বিএনপির গত কমিটির মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি দলীয় মনোনয়নও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহাদাত। চকবাজার এলাকায় ‘জীবন চিত্র ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও আছে লুসির।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে বিএনপি নেত্রী লুসি খান। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের খ্যাতিমান এক শিল্পপতির পুত্রবধূ লুসি খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা সাবেকমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের নিকটাত্মীয়।
লুসি খানের অভিযোগ, মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়ায় তিনি শাহাদাত হোসেনের রোষানলে পড়েন। জীবনচিত্র ফাউন্ডেশন থেকে তিনি নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করতেন। কিন্তু মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়ার পর থেকে শাহাদাতের বাধায় তিনি আর চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করতে পারেননি। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও তিনি ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করে শাহাদাতের বাধায় ব্যর্থ হন। এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে আটকে রেখে শাহাদাত হয়রানি করেন।
দলের কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের পাশে বিএনপি নেত্রী লুসি খান। ছবি: সংগৃহীত
নগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘লুসি খান পেশায় চিকিৎসক। তিনি একটি এনজিও পরিচালনা করেন। ওই এনজিও থেকে শাহাদাত হোসেন বিভিন্ন সময়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করে লুসি খান একটি মামলা দায়ের করেছেন।’
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে সড়ক দখলে নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ১৫ জনকে আটক করেছে। এই সংঘর্ষের ৩ ঘণ্টা পর আটক করা হয় ডা. শাহাদাত হোসেনকে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসা ছাত্রদলের একটি মিছিল থেকে হঠাৎ পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু হয়। এরপর সড়কে মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামে আগুন দেয় বিএনপির কর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে প্রথমে মিছিলে বাধা দেয় এবং পরে গুলিবর্ষণ শুরু করে তাদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাচ্ছিলাম। কোনো কথা ছাড়াই পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমরা সমাবেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ দেখে তারা হঠাৎ হামলা চালায়। এতে ৫-৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি
Leave a Reply