দেশের বিমানবন্দরগুলোতে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর বুধবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সক্ষমতা এবং পরীক্ষার মূল্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠায়।
সেই সাতটিকেই অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতীতে করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই পরীক্ষার ফল দেওয়ার অভিযোগ ছিল। আর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনায় ছিল নানা অসঙ্গতি। প্রথমে তারা র্যাপিড পিসিআর বললেও তাদের তা নেই এবং পরবর্তী প্রস্তাবনায় তা মোবাইল ডিভাইস উল্লেখ করে এবং খরচ বাড়িয়ে দেয়। এই সাতটির মধ্যে দুটির সক্ষমতা রয়েছে।
বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অনুমোদন বিতর্কিতরা পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ায় বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। কারণ সঠিক রিপোর্ট তারা দিতে পারবে কিনা সন্দেহ। ‘বালতি টেস্ট’ মার্কা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট সঠিক আসবে না এটাই স্বাভাবিক। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এটা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব দেশে অনেক আছে। কিন্তু তাদের কেন দেওয়া হলো না? এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার অর্থের লেনদেন হতে পারে।
গত ১০ জুন বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে চারটি ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। টাকার বিনিময়ে করোনা পজিটিভ ব্যক্তিকে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় নানা অনিয়মের কারণে এই চারটি ল্যাবে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরমধ্যে আছে সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার ও স্টেমজ হেলথ কেয়ার। সে সময় অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালকের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের পজিটিভ রোগীকে নেগেটিভ সনদ দেওয়া, নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই নেগেটিভ সনদ দেওয়া, প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নমুনা সংগ্রহ বুথের নামে দালাল নিয়োগের মতো বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডিএইচআইএস-২ ডাটাবেজ যাচাই ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনাকাক্ষিত, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং দেশের ভাবমূর্তি ভয়ংকর ভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। এ অবস্থায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব ল্যাব ও এর অধীন অন্যান্য বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহসহ বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে গত বছরের ১৩ জুলাই একদিনে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত আলাদা পাঁচটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরমধ্যে স্টেমজ হেলথ কেয়ারকে কাতারের ভিসা প্রত্যাশীদের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, ওই হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে কোভিড-১৯ আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষার অনুমোদন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো। এতে আরও বলা হয়, হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাবরেটরি কোভিড-১৯ আরটি-পিসিআর পরীক্ষার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে আবারও অধিদফতরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। এছাড়া আরটি-পিসিআর ও আমদানি করা কিটের অনাপত্তিপত্র ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে নিতে হবে। অধিদফতর সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির পর এই সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ইত্তেফাক
Leave a Reply