পাবনার বেড়া পৌরসভায় মেয়র নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থন চেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জন। মঙ্গলবার বেড়া পৌর এলাকায় উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. আব্দুল বাসেদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে জামায়াতের সহযোগিতা ও সমর্থন চান তিনি।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সমর্থন চাওয়ায় জেলাজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
টুকুপুত্রের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. আব্দুল বাসেদ জানান, মঙ্গলবার সকালে আসিফ শামস রঞ্জন আমার অফিসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, সে কারণে তিনি আমার কাছে ভোট চান। বেড়া পৌরসভায় জামায়াতের প্রায় ১০ হাজার ভোট রয়েছে। আমাদের দলীয় প্রার্থী না থাকায় রঞ্জন জামায়াতের ভোট তার পক্ষে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কেবল রঞ্জন নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুর রহমান মাসুদও সমর্থন চেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন।
জামায়াতের সমর্থন চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, প্রাত ভ্রমণে বের হয়ে জনসংযোগের সময় জামায়াত আমির ডা. আব্দুল বাসেদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তাদের এলাকার মানুষের ভোট ও দোয়া চেয়েছি। জামায়াতের ভোট ব্যাংকের সমর্থন চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
রঞ্জন আরো বলেন, আমি প্রকাশ্যে মিটিংয়ে বলেছি, যেহেতু জামায়াতের প্রার্থী নেই। তাদের ভোট কেন্দ্রে আসারও কোন প্রয়োজন নেই।
এদিকে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়। রফিকুল ইসলাম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী ফেসবুকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্ট্যাটাসে বলেন, বেড়ায় আওয়ামী লীগের কী এতটাই দৈন্যদশা যে জামায়াতের কাছে সমর্থন চাইতে হলো? মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, সাবেক জাময়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্বজন ও শিষ্যদের কাছে ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগের অবমূল্যায়ন করেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামায়াতের সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি ‘লজ্জার’ ও ‘নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল।
তিনি বলেন, বেড়া যুদ্ধাপরাধী নিজামীর জন্মস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার করে পাবনাবাসীকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত জনগণের কাছে ঘৃণিত দল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে জনসমর্থন নৌকার পক্ষে। নৌকার বিজয়ে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন সহযোগিতা আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, দল হিসেবে আমরা জামায়াতকে ঘৃণা করি। সামাজিকভাবে মেলামেশা নিষিদ্ধ না হলেও, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামায়াতের রাজনৈতিক সমর্থন নেয়ার সুযোগ নেই। আসিফ শামস কেন জামায়াত আমিরের কাছে গিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে দল বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, বেড়া পৌর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিফ শামস রঞ্জন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাংসদ শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজি এস এম সাদিয়া আলম। এ ছাড়া মেয়র পদে আরো মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ডা. আব্দুল আওয়াল ও কেএম আব্দুল্লাহ।
বেড়া পৌরসভায় ভোট ২৮ নভেম্বর। এখানে মেয়র পদে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে টুকুপত্র ছাড়াও রয়েছেন সংসদ সদস্যের ভাই বর্তমান মেয়র আব্দুল বাতেন, ভাতিজি এসএম সাদিয়া আলম। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সদস্য এ এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য আব্দুল আওয়াল এবং স্থানীয় কে এম আব্দুল্লাহ।
পূর্বপশ্চিমবিডি
Leave a Reply