যারা থেকে যাবেন, সৌভাগ্যবান, সেই মানুষেরা কি, করোনা গেলে ঠিক হয়ে যাবেন! এ সব করোনা, যে সবের জন্য এলো, তা ছেড়ে দেবেন?
অবশ্য সাধারণ মানুষের বিষয়টি যেমন তেমন, অসাধারণ (!) শক্তিধর গুটি কয় মানুষ, যারা ক্ষমতার চুড়ায় থাকেন, তাদের ঠিক হয়ে যাওয়াই, অন্য সবার ঠিক হয়ে যাবার নিয়ামক। তিঁনারা কি ঠিক হবেন!
সাধারণ মানুষ, পৃথিবীর নানা বিপ্লবে অসাধারণ(!) মানুষের ডাকে সারা দিয়ে, সুদিনের স্বপ্নে বিভোর হয়েছে, কিন্তুু অধিকাংশ সময় তারা প্রতারিত হয়েছে, তাদের লাভের গুড় পিঁপড়া খেয়েছে।
বিপ্লবের কিছু কাল পরেই সাধারণের মোহ ভঙ্গ হয়ে যায়। তারা তখন বুঝতে পারে, তারা ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র, শক্তিধরেরা সব পেয়েছে, আর তারা অনেক হারিয়েছে।
সাধারনের দোষ, তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। শক্তিধরেরা শোষণের প্রশ্নে একে অন্যের দোসর। এ ঐক্য প্রায়শই নীতির তোয়াক্কা করে হয়না, অবশ্য একটাই পৃথিবীর মৌলিক নীতি(!)- ‘জোর যার মুল্লুক তার’!
আমার মতে, পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস জানার ও পড়ার পর যে সার কথা পাওয়া যাবে, সমুদ্র মন্থনেে যেমন অমৃত, তা হলো, এ কথাটাই!
মানুষের শ্রেনী দু’টি, বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘ শোষক আর শোষিত’।
অন্য যতো রকম ভাবে মানুষকে ভাগ করা হোক না কেনো, তা কোনো না কোনো স্বার্থে করা হয়। সবাই মানুৃৃষ। কবি নজরুল বলেন- ‘সবাই এক মায়ের সন্তান’। না, কথাটা চরম হলো বটে। নানান রকম ভাগ; জাতি – গোত্র- ভাষা- ধর্ম – পেশা ইত্যাদী নানা রকম, তা তো থাকবেই। শুদ্ধ চিন্তায়, এ ভাগ হলো, পরষ্পরকে জানার, বিনিময়ের এবং সু -প্রতিযোগীতার, সম্মানের, সহানুভূতির, বিচিত্র মানবেরর বাগানের ফুলের মতো। নানান ফুলে যেমন বাগান হয় সমৃদ্ধ, তেমন।
তবে মানবের এ শুদ্ধ ভাগগুলিকে অসাধারণ(!) রা চমৎকার উদ্ভাবনী প্রকৃয়ায় ব্যবহার করে, সাধারনকে, তাদের মৌলিক বিভাজন; শোষক ও শোষিত, থেকে ভুলিয়ে, একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে, নিজেরা লাভবান হয়।
কোনো কবি লিখেছেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে, এটা করবোনা… ওটা করবোনা…ক্ষমা চাইবো…এটা করবো…ওটা করবো…প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করবো… ! জানি, এ হলো, তার মনকষ্টে উদৃত বর্তমানের কারনের আক্ষেপ।
আমি বোধ করি, বলতে পারি, এসব ভালো কিছুই হবেনা, আবার যেই সেই, বরং, আরো খারাপ হবে!
তবে এটাও আমার আশা নয়,
আশংকা করতেও ভয়!
যেনো না হয়!
মানুষ যেনো আবার ভালো হয়,
আদীম মানুৃষের মতো ভালো হয়,
ভদ্র সভ্য(!) মানুষের মতো নয়,
অভিমানী সুরে হয়েছে আমার, এ কথা বলার আশ্রয়।
আমার এবং, সকল সুৃধীজনের চাওয়াইতো হলো, ‘আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম যেনো থাকে- দুধে- ভাতে- -সুখে- শান্তিতে’!
করোনা গেলে মানুষের স্বভাব কি হবে?
তা তো করোনায় তারা কি করে, তা থেকেই বুঝা যায়। করোনায় তাদের আচরন আরো লজ্জাজনক ভাবে নীচুতায়, অপরাধে, নীতি না মানায়, লোভে, নির্যাতনে, দাপটে, লুটে, মিথ্যায়, আকাশচুম্বি অহংকারে, তোষামোদে, মঞ্চে- মিডিয়ায় তির্যক ও টিপ্পনির ভাষা প্রক্ষেপণে চর্চিত- নিপতিত।
বহু কাল ধরেই সাধারন মানুষ, কিছু কুলাঙ্গারের জন্য কেবল রক্তপাত, অসাম্য ও নিপীড়ন দেখেছে, পৃথিবী জুড়ে,
আজও দেখছে, দেশে দেশে, নবতর কৌশলে দেখছে করোনা কালে!
কতো মেধাবী মরে গেলেন। কতো চিকিৎসক শহীদ। সম্প্রতি গেলেন ডা. তুষার। কী যুদ্ধটাইনা না করলেন, প্রথম থেকে, করোনার সঙ্গে! এমন একজন মেধাবী বৈজ্ঞানিক, দেশ- বিদেশের বহু ডিগ্রী অর্জনকারী, বাংলাদেশের মানব- ল্যব সাইন্সের এক রত্ম, সুফি, গুণী, সুবক্তা, স্বভাব কবি, দারুন শিক্ষক, পরোপোকারী চিকিৎসক পেতে, জাতিকে বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ( আমি তাঁর কথা, উদাহরণ হিসাবে বললাম মাত্র, এ ভাবে বহু গুণী চিকিৎসক চলে গেছেন, আমার পেশার, আমি জানি, তাই চিকিৎসকের কথা বলছি, এমনি করে অন্য পেশারও)
ওহে আল্লাপাক, তাকে/ তাদেরকে পুরষ্কৃত করুন।
চিকিৎসক -নার্স সহ, এ দেশে চিকিৎসক মৃত্যু হার তুলনামুলক হারে বেশী, সকল পেশার কর্মী, যারা ঝুঁকির মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে, যারা নিয়ম মেনে চলেও-বাইরে বের হয়েছিলেন, তার ও তার সন্তানের রুটির জন্য, যারা নানা ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, চিকিৎসা পেয়েছেন, পাননি, জীবন বাতাস- অক্সিজেনের অভাবে বা অক্সিজেনে ডুবে গিয়েও ফুসফুসের ক্ষমতাহীনতায়, জীবনের শেষ সম্বল- টাকা কড়ি- ঘটি- বাটি হারিয়ে, নিকট জনকে ফতুর করে, ঝুঁকিতে রেখে, এক করুন ইতিহাস তৈরী করে, মর্মান্তিক স্মৃতি রেখে চলে গেছেন, তাদেরকে, হে আমাদের মাওলা, আপনি ক্ষমা করে প্রথম- জান্নাত দান করুন।
আর যারা, বেঁচে গেছেন, এখন ফতুর, নানা রোগ- উত্তর- জটিলতার সাথে লড়াই করছেন, তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা আমার।
ফিদেল বলেছিলেন, ‘আমি কোনো দেশকে মিজাইল সাহায্য দিতে পারবোনা। তবে আমার রয়েছে – গুণী চিকিৎসক, মেধাবী বৈজ্ঞানিক, নিবেদিত শিক্ষক’।
কোনো মিডিয়ায় ডা. তুষারের ছবিটাও দেখানো হয়েছে কি! জানিনা। উপর তলার সমাজ অকৃতজ্ঞ। তেলে মাথায় তেল দেয় তারা। তারা শক্তের ভক্ত আর নরমের যম।
উত্তেজিত চিকিৎসকের খন্ডিত ভিডিও দেখায়ে তাদের বিতর্কিত করতে, কতক তৎপর। কিছু পেশাজীবীকে এমনি চেনা যায়। এ দুর্যোগে, চিকিৎক ও সেবা কর্মীকে জলদি পথ ছেড়ে দেবার কথা, লক ডাউন ভেঙ্গে তারা ঝুঁকিকর সেবায় যাচ্ছেন, তাদের পরিবার ঝুঁকিতে, তার সেবা দিতে গিয়ে মরছেন! তাদের অনেককেই ইতিমধ্যে হেনস্থা হতে হয়েছে, জরিমানাও করা হয়েছে, সে ব্যাথা, চিকিৎসকটির মনে দাগ কেটে আছে, তারপরও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা! কতক
মানুষ, এ ভিডিও দেখে, আবার চিকিৎসককেই দুষছেন!
অদ্ভুত সেলুকাস। এঁরা, ভাল মন্দও বুঝেনা। সৎ -সঠিক বুঝেনা, বুঝেও বুঝেনা, বন্ধু চিনেনা, বিপদের কালে- গজবের কালেও না!
এ উপমা, সমাজ বুঝতে, উদাহরণ হিসাবে দিলাম। সামান্যও ভালবাসার কমতি নেই কারো প্রতি, সম্মান ও কৃতজ্ঞতার ঘাটতি নেই লেখকের, সকলে আমরা – ভাই। সকলেই গুরুত্বপূর্ণ। সকলেই সম্মানিত। সুশিল আচরন, সকলের কাছ থেকেই প্রত্যাশিত।
আবার, আলাদা করে কোন ঘটনার মুল্যায়ন করাও ঠিক না। এটা একটা টুকরা মাত্র। ঘটনা সেই অর্থে নৈব্যক্তিক। ঘটনা নয়, ঘটনা ঘটার আয়োজনের যোগান সৃষ্টি হয় অনেক পরষ্পর অবস্থার উর্বরতায়। সেই অনভিপ্রেত
উর্বরতাই দোষী। ঘটনা মিশে থাকে ঘটনায়।
‘আমার মাস্ক না পরার জন্য চাপ গিয়ে পড়ছে, হাসপাতালে, সরকারের উপরে, আমাদের অর্থনীতিতে, অন্য নিরপরাধ মানুষের উপরে, চিকিৎসক ও সেবা কর্মীর উপরে। অধিক কাজে তারা এখন দিশেহারা, অনেক কিছু বলা যাবেনা, তারা যেনো মানসিক ভাবে তাদের সহযোগী সহ ভেঙ্গে না পরে’! – – – কোথায় কি, বরং ঠিক তার উল্টোটা।
আবার , ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে দেখি, ষাট হাজার টাকার রোগীর- বেড় কিনেছে তিন- সাড়ে তিন লাখে, এটাতো জলের উপর বরফ দেখলাম, এতেই বুঝা যায় লুটপাট চলছে কতো গভীরে! নিজে যেনো মরবেনা। কতো চাই! কাকে কাকে দিয়ে কারা কারা, তারা! এমন দুর্দিনেও খায়! মানুষের বাঁচার অক্সিজেন খায়। মানুৃষের মাথা চিবায়ে খায়! রক্ত খায়!
‘এবার চলো, ঈদের মার্কেটিং এ। সব দল বেঁধে’।
টাকা পেলো এতো কই! এখন তো রোজগার- পাতি বন্ধ প্রায়। এবারের টাকাটা অন্য ভাবে বিতরন করলে, অধিক পুন্য হবে! আনন্দের জন্যই তো করা। গরীব দুঃখী, তাদের দিলে, তাদের খুণী দেখলে, আনন্দ শতগুণ বেশী হবে। এভাবে ভাবাই তো সুস্থতার লক্ষণ!
যান। মার্কেটিং এ যান। ব্যবসা তো হতে হবে। ব্যবসায়ীদের বাঁচতে হবে।
তবে কি, মাস্কটাও পরবেন না। নাকের কাছে ভয়াবহ করোনা। ভারতে। আমরাতো তাদের পেটে। এটা বুঝে সরকার ভারতের সাথে আসা যাওয়া আপাতত বন্ধ করেছে। আফ্রিকানটা বোধ হয় কমতির দিকে, তবে বলার সময় আসেনি, আমি বিশেষজ্ঞও নই। ভারতেরটা যদি আসে! রক্ষা নেই আর। শ্বাস ফেলেও একটু আরামে মরার দিন হারাম হয়ে যাবে।
‘করোনা তার স্বার্থ বুঝে , তারা বাঁচার জন্য; তাদের রূপ-ধর্ম- স্বভাব পাল্টায় ; মানুষ তাদের বাঁচার স্বার্থে সামান্য বদ আচরনটা পর্যন্ত পাল্টায় না’!
©ডাঃ ইকবাল আনোয়ার, সাবেক সভাাপতি, বিএএমএ, কুমিল্লা।
Leave a Reply