বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

মুনিয়ার ৬ ডায়েরি নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ

ইত্তেফাক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১
  • ৬৩৮ বার
মুনিয়া-আনভীর

মোসারাত জাহান মুনিয়ার নিজ হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। পুলিশ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটিকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনার শিকার নারীকে হতাশা গ্রাস করেছিল, তিনি মারাত্মক মনঃকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরি হবে।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ ও ‘অভিপ্রায়’ এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরি। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ঘটনাটিকে এক সুতোয় গাঁথতে, অর্থাৎ কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছে, তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোন ও পারিপার্শ্বিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সংগ্রহ করেছে। ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যু কী কারণে, সেটি জানা সবচেয়ে জরুরি।

মামলার অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করা ও একসঙ্গে নিয়ে আসা জরুরি। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আগে পুলিশ এই কাজগুলো আগে করতে চায়। যেহেতু মামলাটি বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা, ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের মালিক, মেয়ের জামাই ও ভবনের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেছে।

তিনি বলেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। শরীরের অন্য কোথাও জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঝুলে থাকায় হাত-পা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা ফুলে ছিল।

এদিকে মুনিয়াকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলার একমাত্র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় ১৪ ক্রমিকে তার আগাম জামিনের আবেদনটি শুনানির জন্য এসেছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলেই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়, তিনি যেই হোন। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

অপরদিকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শারুন সাংবাদিকদের বলেছেন, তার কাছে মুনিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, মুনিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত বছর মুনিয়া ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিই তাকে জানান, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর সম্পর্ক হয়েছে। তবে শারুনের দাবি, মুনিয়ার মৃত্যুর পর ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা।

ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটে কথোপকথন কত তারিখের, তা স্পষ্ট নয়। সময় বিকেল পাঁচটা বাজার কিছু আগে। খুদে বার্তার ওই কথোপকথনে মুনিয়া শারুনকে লেখেন, তিনি ভালো নেই। এরপর লেখেন, ‘উনি তো আমাকে বিয়ে করবে না। কী করব আমি?’ জবাবে শারুন লেখেন, ‘আগেই বলেছিলাম, ওর কথা শুইনো না। ও আমার বউকে বলছে বিয়ে করবে, কিন্তু করে নাই। মাঝখানে আমার মেয়েটা মা ছাড়া হয়ে গেছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!