বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

মুসলিম রোগীর মৃত্যুর মুহূর্তে ‘কালিমা’ পাঠ করলেন হিন্দু চিকিৎসক

ইত্তেফাক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২২ মে, ২০২১
  • ৬৯৫ বার
ডা. রেখা কৃষ্ণান।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছিলেন এক মুসলিম নারী। কিন্তু ওই সময় তার পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালের কেবিনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তখন সেখানে ছিলেন কেবল একজন হিন্দু নারী চিকিৎসক। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর শেষ ইচ্ছে তিনি জানেন না। তাই রোগীর মৃত্যুর মুহূর্তে ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করলেন চিকিৎসক। দোয়ার শেষ লাইন- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই মুসলমান নারীটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ঘটনাটি দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালার। আজ (২১ মে) এ খবর প্রকাশ করেছে খালিজ টাইমস।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই হিন্দু চিকিৎসকের নাম ডা. রেখা কৃষ্ণান। তিনি কেরালার সেভানা হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। তার জন্ম ভারতে হলেও বেড়ে উঠেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। বর্তমানে তার পুরো পরিবার মরুর দেশে থাকলেও কেবল তিনি একাই মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছেন। জানান, আমিরাতের বহু সংস্কৃতির মাঝে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা এবং নিজ পরিবারের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন, কীভাবে অন্য ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষদের শ্রদ্ধা করতে হয়।

ডা. রেখা কৃষ্ণান জানান, করোনায় আক্রান্ত ৫৬ বছর বয়সী মুসলিম নারী বেভাথুকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় নিউমোনিয়াতেও সংক্রমিত ছিলেন। সে জন্য তাকে তখন থেকেই ভেন্টিলেটর দিয়ে রাখা হয়। কিন্তু ১৭ দিন ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পর তার অঙ্গগুলো অচল হতে শুরু করে। তাকে বাঁচানোর আশা হারিয়ে ফেলি। এমন অবস্থায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা ভেন্টিলেটর খুলে ফেলার অনুমতি দেন। তারা পরিস্থিতি ও বাস্তবতা মেনে নিয়েছে।

যখন আমি সেখানে (কেবিন) দাঁড়িয়ে তার মৃত্যুর দিকে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছিলাম তখন খুবই খারাপ লাগছিল। আমি জানি না, পরিবারের সঙ্গে তার শেষ স্মৃতি কী ছিল। আমি নীরবে তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করতে লাগলাম এবং এরপরই কালিমা পাঠ শুরু করি। যদি তার কন্যা বা পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকতো তখন তারাও একই কাজ করতো। এটি কেবল ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং মানবিকও। যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছে তা হলো- যখন আমি কালিমা পাঠ করা শেষ করি ঠিক তখনই ওই নারী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এই দৃশ্য দেখার পর মনে হলো, কেউ যেন অদৃশ্যভাবে আমাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছে, যোগ করেন তিনি।

জনান, তার পিতা-মাতা সবসময় তাকে অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান করতে শিখিয়েছে। মন্দিরে পূজা করার সময় শিখিয়েছে যে, মসজিদে ইবাদাত করাটাকেও যেন স্বীকার করি। কারণ, উভয় জায়গাতেই পজেটিভ এনার্জি আসে। ভারতীয় এবং ইসলামিক সংস্কৃতি মানেই হলো অন্যদের সম্মান করা। আমিরাতে মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া পারস্পরিক সম্মানের কারণেই আমি ইসলামকে ধর্ম হিসেবে মর্যাদা দিতে শিখেছি।

ইত্তেফাক.

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!