নিজের অফিস কক্ষে নিয়ে নিজ হাতে করোনা টিকা প্রয়োগ করে আলোচনায় উঠে এসেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নাদিয়া নাসরিন। কুমিল্লা নগরীর হারুণ স্কুল কেন্দ্রে তিনি তার অনুসারীদের এ টিকা পুশ করেন। টিকা দেওয়ার কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি কুমিল্লা নগরীজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
ছবিতে দেখা যায়, নগরীর হারুণ স্কুলের পাশে নিজ অফিস কক্ষে কয়েকজনকে টিকা পুশ করেছেন নাদিয়া নাসরিন। পাশেই তার বসার চেয়ার রয়েছে। তিনি প্রথমে বোরকা পরে টিকা দিচ্ছিলেন। পরে অতিরিক্ত চাপে এবং প্রচ- গরম থাকায় বোরকা ছেড়ে দেন।
শতাধিক লোককে এ টিকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কিছু লোককে এ টিকা প্রদান করেছেন বলে স্বীকার করেন কাউন্সিলর নাদিয়া নাসরিন। তার টিকা দেওয়ার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হলে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেন। একজন লেখেন তিনি কোন যোগ্যতার বলে এভাবে নিজে টিকা দিয়ে দিলেন, ‘তিনি নিজের খেয়াল খুশিমতো
কাজ করেছেন।’ আরেকজন লেখেন- ‘কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়া করোনার মতো এতো ভয়াবহ মহামারীর টিকা কীভাবে নাদিয়া নাসরিন সাধারণ মানুষকে দিতে পারেন? টিকা দিতে যেখানে নার্সদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে, সেখানে তিনি কীভাবে টিকা দিলেন?’
এ ব্যাপারে নাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি বেশ কিছু লোককে টিকা প্রয়োগ করি। স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই বিষয়টা জানেন। তিনি বলেন, আমার ইনজেকশন পুশের অভিজ্ঞতা আছে। ৫/৬ বছর আগে পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।’ বিশেষ এ টিকা দিতে তার কোনো প্রশিক্ষণ আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘না এ টিকার প্রশিক্ষণ নেই।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি। এ ধরনের কেউ টিকা দিতে কোনো অনুমতি নেননি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাদিয়া নাসরিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর। টিকার চেয়ে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় এমনিতেই কেন্দ্রটিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার ওপর বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী শৃঙ্খলাভঙ্গ করে নিজেদের লোকদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে ওই কেন্দ্রে। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বাধ্য হয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর সংঘর্ষের আশঙ্কায় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এদিন নির্ধারিত ৬০০ ডোজের বাইরে আরও তিনটি (৩, ১৫ ও ২৩ নং) ওয়ার্ডে ২২০ ডোজ বেশি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ সময় নাদিয়া নাসরিন বেশ কয়েকটি টিকার ভায়েল ও বেশ কিছু বিশেষ সিরিঞ্জ নিয়ে টিকা কেন্দ্রের অদূরে তার নিজের বাড়ির সামনের অফিসে চলে যান। তার অনুসারীরাও ওই অফিসে যান। সেখানে তিনি নিজ হাতে টিকাপ্রত্যাশীদের মাঝে করোনা টিকার (মডার্না) প্রথম ডোজ প্রয়োগ করেন।
Leave a Reply