খান লিটনঃ সম্ভবত ১৯৯৭ সনে জার্মান আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সম্মেলনে দীর্ঘদিনের সভাপতি বাবু শ্রী অনিল দাশ গুপ্ত ব্যাপক ভরাডুবির মধ্য দিয়ে তার পদ হারান । জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কাজী মতিন ও সাধারন সম্পাদক খসরু খান । যদিও তারা মূল ধারার হয়ে সাংগঠনিক কাজ করতে পারেননি । কারন শ্রী অনিল দাশের তত্বাবধনে প্রয়াত আনোয়ারুল ইসলাম রতনকে সভাপতি ও বি,এম ফরিদ আহমেদকে সাধারন সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি করেন । যা তৎকালিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক প্রয়াত জিল্লুর রহমান কৃত অনুমোদিত ছিলো ।সেই যাই হোক , পরবর্তীতে দলীয় মাননীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাবু শ্রী অনিল দাশকে সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন ও লন্ডনে বসবাসরত প্রয়াত এম এ গনিকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেন । সেই সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু । দীর্ঘ পথ পরিক্রমনায় তারা তাদের পূর্নাংগ কমিটি করেননি বা করতে পারেননি । কখনও কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে সাংগঠনিক মিটিং হয়নি আমার জানামতে ।
ইউরোপের প্রায় সব দেশেই আওয়ামী লীগের দুই/তিনটা করে কমিটি থাকায় , বিরোধ মিটানোর নামে সেই দেশে ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের ব্যানার ঝুলিয়ে দিতেন। আর নেতা কর্মীদের বলতেন , “ এটা সভানেত্রীর নির্দেশ “। আর নেত্রীকে বলতেন ,“নেত্রী , আমি সব ঠিক করে ফেলেছি “। মুখে মুখে কমিটির পদ দেয়া হতো । এভাবেই চলে,দাদা তোকে বললাম ,তুই আমার ভাই ,কাউকে বলিস না “ খেলা । তবে শ্রদ্ধাভরে সবাই বলে কোন লেনদেনের বদনাম ছিলো না বা নাই । মাননীয় সভানেত্রীর অগাধ বিশ্বাস, ভরসা ,ভালবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ কে পুঁজি করে নিজেদের রং এ চালান সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ । প্রতিটি দেশে হয় দুই/তিন কমিটি। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে ,নালিশ পৌঁছতে থাকে।
অনেক পরে হলেও বছর দুই আগে জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সফর সময় দলীয় সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুন ,মেধাবী ,লেখক/ সাংবাদিক, ও বাবু শ্রী অনিল দাশ গুপ্তের চার খলিফার এক খলিফা হিসেবে পরিচিত ,সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ভিয়েনায় বসবাসরত এম এ নজরুল ইসলামকে সভাপতির দায়িত্ব দেন । আমার অভিজ্ঞতায় ইউরোপের আওয়ামী রাজনীতির তৃনমূলের কর্মী প্যারিসে বসবাসরত মুজিবুর রহমানকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেন ।
যেন পুরানো বোতলে নতুন মদ! তাদের নিয়ে অভিযোগ যে, দায়িত্ব পেয়েই বিভিন্ন দেশে হাইব্রিড ও জাতিয় পার্টি ,ফ্রীডম পার্টি কিংবা বিএনপি বা জা’মাতের লোক নিয়ে কমিটি করেছেন বা করছেন অর্থের বিনিময়ে । যদিও এই লেনদেনের কোন প্রমান নাই । তবে একটু ভিন্ন মত দেই , তা হলো, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভাল কাজে অনুপ্রানিত হয়ে যদি অন্য দল থেকে কেউ আসে, সেটা আওয়ামী কর্মীদের সফলতা । অন্য দিকে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি দুই বছরে বা সাংগঠনিক মিটিং করেননি । তাহলে ইউরোপের দেশগুলোর কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন না বলে অনেকে বলছেন ।হয়তো এরাও নেত্রীর কাছে বিচারাধীন ব্যাপারগুলোকে নেত্রীকে না জানিয়ে নিজেদের মতো করে করছেন , তাহলে এটা সাংগঠনিক অন্যায়।
বেশীর ভাগ দেশে পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগের দূর্বল রাজনৈতিক কারনে । প্রতিদিনই জুমের কল্যানে A টিম B টিমের মিটিং হচ্ছে , যে যার মতো ধূঁইয়া দেয় ।
প্রয়াত জনাব এম এ গনি একজনকে বলেছিলেন তোমার মতো নেতা দরকার নাই,যাও বর্ডারে গিয়ে ওয়াইন ব্যাচো। অন্যদিকে সবার মিটিং এ কেন্দ্রীয় নেতারাও যোগ দেন ।নেতা কর্মীরা নিজেদের প্রতিপক্ষ নিজেরাই হচ্ছেন । তবে দলীয় রেওয়াজ রীতির কথা যদি বলি তবে আমার জ্ঞানমতে, দলীয় সভানেত্রী যাদের মনোনীত করেছেন বা দায়িত্ব দিয়েছেন, এরা যতই অযোগ্য হোক , তারাই বৈধ নেতা দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ( চেইন অফ কমান্ড). আর সেই বৈধতার বদলে তারা যে কোন দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে বা দিতে পারে এবং দেশীয় কমিটির অনুমোদনও দিতে পারে । যে কোন গনতান্ত্রিক দলের সিদ্ধান্ত কর্মীদের মানা দায়িত্ব । কিছু কর্মীদের অনেক সময় দলের সিদ্ধান্ত মন মতো না ও হতে পারে । সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি হাই কমান্ড না মানে তা হয় দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ ও বিদ্রোহীতার শামিল । আওয়ামী লীগ করলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে আর আমি লীগ করলে যা খুশী তাই করা যায় । তারপর দল থেকে সুবিধা যারা নেয় , নিতেই পারে যোগ্যতা অনুযায়ী । পৃথিবীর সব দেশেই দল যখন ক্ষমতায় আসে , যোগ্যতা অনুযায়ী পদ পদবী পায় ,এটা অন্যায় বলে মনে হয় না ।
সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে ঐক্যমতের ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগ হোক , নিজেরা নিজেদের প্রতিপক্ষ না হই এই কামনা , যেহেতু বেশীর ভাগ নেতাকর্মীরা শুধু দল ও দেশকে ভালবেসে দল করে । ভুলত্রুটি মার্জনীয় ।
লেখক(খান লিটন) পরিচিতি—সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বরগুনা সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ , সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ, আবুধাবী বংগবন্ধু পরিষদ, সাবেক প্রচার সম্পাদক জার্মান আওয়ামী লীগ( অনুমুদিত) ও পরে সাবেক জৈষ্ঠ সহ সাধারন সম্পাদক জার্মান আওয়ামী লীগ (রতন -স্বপন গ্রুপ)।
নোট:- মতামত নেয়ার জন্য ইউরপীয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব এম এ নজরুল ইসলাম ,সাবেক সভাপতি বাবু শ্রী অনিল দাশ গুপ্ত কে বার বার ফোন করে পাওয়া যায়নি তবে সাধারন সম্পাদক জনাব মুজিবুর রহমানকে পেলে তিনি বললেন , তিনি কিছু জানেন না , সব সভাপতি জানেন ।
Leave a Reply