মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

স্বামী বিদেশে, দেশে স্ত্রীর যত অপকর্ম

যুগান্তর
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১
  • ৩৩৮ বার

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভদ্রদীঘি গ্রামের সুজন প্রামাণিক বিদেশে থাকেন। দেশে নানা অপকর্ম করে বেড়ান তার স্ত্রী রিনা বেগম (৩৭)। একটি চক্র গড়ে তুলে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাড়িতে ডেকে এনে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে টাকা আদায় করে তিনি।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বুলু মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ মূলহোতা রিনা বেগমসহ তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি থেকে সিসিটিভির ডিভিআর জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভদ্রদীঘি গ্রামের প্রবাসী সুজন প্রামাণিকের স্ত্রী রিনা বেগম (৩৭), তার সঙ্গী একই উপজেলার কহুলী তালুকপুরের মিলন হোসেনের ছেলে লিটন হোসেন (২২) ও কহুলী গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে গোলাম রাব্বি (২০)।

পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে আবদুল মোত্তালেব (৩৬) সিলেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত দেড় মাস আগে ‘শিপলু সাথী’ নামে একটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে রিনা বেগমের পরিচয় হয়। মাঝে মধ্যে চ্যাটিংয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

মোত্তালেব কয়েক দিন আগে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য গুরুদাসপুর আসার পরিকল্পনা করেন। রিনা বেগম তা জানতে পেরে তাকে বারবার নিজ বাড়িতে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে সরল বিশ্বাসে তিনি রাজি হন।

পরামর্শ অনুসারে গত ১৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নন্দীগ্রামের ভদ্রদীঘি গ্রামে প্রধান আসামি রিনা বেগমের বাড়ির সামনে পৌঁছেন। এ সময় রিনা বেগম ও অন্য দুইজন তাকে আপ্যায়নের নামে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান।

তাদের আচরণে মোত্তালেব ভয় পেয়ে বাড়ি যেতে চাইলে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। রাজি না হলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে আরও চার যুবক বাড়িতে আসে। ছয়জন মিলে হাত-পা বেঁধে মারপিট করতে থাকে। পকেট থেকে সাত হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। এরপর তাকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা হয়।

এ ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে এবং পরিবারকে দেখানোর হুমকি দেয়। মারপিটের মাত্রা বেশি হলে তিনি (মোত্তালেব) কিছু টাকা দিতে রাজি হন। বিকালে স্বজন ও পরিচিতদের কাছে ফোন করলে তারা দুই দফায় ১৭ হাজার ২০০ টাকা বিকাশ করেন। আসামিরা আরও  ৮৫ হাজার টাকা দাবি করে।

মোবাইল ফোনে থাকা মেমোরি কার্ড, মানি ব্যাগে থাকা দুটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড কেড়ে নেয়। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুটি ফাঁকা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার পর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

আবদুল মোত্তালিব ভ্যানযোগে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে আসেন। এরপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার পর তার সংস্থার নন্দীগ্রাম শাখায় রাতযাপন করেন। বৃহস্পতিবার সকালে নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে প্রতারক চক্রের হোতা রিনা বেগম, তার সহযোগী লিটন হোসেন, গোলাম রাব্বী ও কহুলী গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে বুড়ইল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বুলু মিয়ার (৫৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নন্দীগ্রাম থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বামী সৌদি আরবে থাকায় রিনা বেগম তার সহযোগীদের নিয়ে প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। তিনি ফেসবুকে প্রথমে বন্ধু ও পরে প্রেমিক বানিয়ে সহজ-সরল জনগণকে বাড়িতে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। বিবস্ত্র করে ছবি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে তিনজনকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রেফতার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!