প্রবাসীদের নানা সময়ে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যেতে হয়। দেশে ঢুকতে বেরুতে এয়ারপোর্ট ক্রস করতে হয়। দূতাবাস কর্মকর্তা কর্মচারীদের ‘স্যার’ না বললে তারা প্রায়ই গোস্যা করেন। আচার আচরণে বুঝিয়ে দেন, তাকে ‘স্যার’ বলতে হবে। কারণ তিনি সাধারণ অভিবাসীদের কাতারের মানুষ নন। কায়দা করে শিখিয়ে দেন- ওই স্যারের কাছে যান/ওই স্যারকে বলেন। এয়ারপোর্টের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সেখানে অহরহ দেখা যায় ইমিগ্রেশন পুলিশ সাহেবরা প্রবাসীদের সাথে ‘তুই তুকারি’ করেন। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা অতি সাধারণ মানুষগুলোর সাথে তারা যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করেন।
স্যারের পাশাপাশি ‘জনাব/মাননীয়/মান্যবর’ নিয়েও প্রবাসীদের বিপাকে পড়তে হয়। প্রবাস কম্যুনিটিতে নেতৃত্ব দেয়া অনেক মানুষকে দেখেছি, নামের আগে ‘জনাব’ না লেখায় মহা হাঙ্গামা করেন। অনুষ্ঠান পন্ড করে দেন। দূতাবাসে/কনস্যুলেটে লেখা প্রবাসীদের অতি জরুরী চিঠিও তারা আমলে নেন না, কারণ রাষ্ট্রদূত বা অন্য কোনো কর্মকর্তার নামের আগে ‘মাননীয়/মান্যবর/জনাব’ লেখা হয়নি। অধিকাংশ সময়ে প্রবাসীদের বাধ্য করা হয় এই শব্দগুলো লিখতে/বলতে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রদূতের নামের আগে ‘মান্যবর’ না লেখার কারণে চিঠি ফেরত দেয়া হয়েছে, সংশোধন করতে বাধ্য করা হয়েছে, এমন বহু নজির আছে। এই মানুষগুলো হয়তো লেখাপড়া শিখেছেন। হয়তো না, নিশ্চই শিখেছেন। কিন্তু সংস্কৃতি শেখেননি। সভ্যতা, মানবতা, দায়িত্ববোধ শেখেননি। তারা নিজেদের আলাদা ভাবতে শিখেছেন। সুপিরিয়র ভাবেতে শিখেছেন। সাধারণ মানুষদের প্রজা ভাবতে শিখেছেন।
মজার বিষয় হলো- সাধারণ মানুষদের টাকায় বেতন নিতে, সংসার চালাতে তাদের বাধে না, ভাই/আফা শুনতে বাধে! দূর্নীতি করতে তাদের সম্মানে লাগে না, ‘স্যার’ না শুনলে লাগে! কেন এমন হয়? কেন তারা সংস্কৃতি শেখেন না? কেন এত হিনমন্যতায় ভোগেন? কেন তারা মানবিক সভ্যতা থেকে দুরে থাকেন? আমার মনে হয়, তাদের গোড়ায় গলদ আছে। তারা লেখাপড়া করে শিক্ষিত শ্রমিক হয়েছেন। মানবিক মানুষ হননি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাদের সভ্য, সংস্কৃতিক, নৈতিক মানুষ বানাতে পারেনি। সুতরাং গোড়ায় হাত দেয়া দরকার।
পলাশ রহমান, সাংবাদিক, ইতালি প্রবাসী।
Leave a Reply