শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

তনু হত্যা মামলা: পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত

সমকাল
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১
  • ৬০৭ বার

তদন্তের বৃত্তেই পাঁচ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে বহুল আলোচিত সোহাগী জাহান তনু হত্যার তদন্ত। পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির পর বর্তমানে এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-ঢাকা (পিবিআই)। আজ শনিবার ২০ মার্চ এ হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো।

তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ও দফায় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ এবং বিচারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করতে করতে এই পাঁচ বছরে অনেকটাই হতাশ, ক্লান্ত ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তবুও পিবিআইর তদন্তে ন্যায়বিচার হবে বলে আশাবাদী এই পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তনুর মৃত্যুর কারণ না থাকায় ডিএনএ রিপোর্টকে ভরসা করে এগোচ্ছে পিবিআই। এই রিপোর্টের অগ্রগতি জানতে সংশ্নিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে পিবিআই।

এদিকে তনুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান করা হয়। এতে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, বড় ভাই নাজমুল হকসহ পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় অধিবাসীরা অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু। পরে রাতে সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার পরদিন করা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কিছুটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় কয়েকদিন পর ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ এ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সুরতহাল তৈরি ও নতুন করে ময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে লাশ ওঠানোর আদেশ দেন কুমিল্লার একটি আদালত। ৩০ মার্চ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে তনুর লাশ উত্তোলন করা হয়। কিন্তু একই বছরের ৪ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।

তনুর ‘মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে না পাওয়ায়’ ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২০২০ সালের শেষার্ধে মামলার সে সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির বিশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সংগৃহীত ডিএনএর প্রোফাইল তৈরি করে ম্যাচিংয়ের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পিবিআই-ঢাকা কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরই মধ্যে ৩ দফায় কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তনুর পরিবারসহ সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছেন পিবিআই-ঢাকার পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান মোবাইল ফোনে  বলেন, ‘মামলাটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ, তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সিনিয়র অফিসাররা পুরো বিষয় মনিটর করছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।’

এ প্রসঙ্গে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলাটি পিবিআই-ঢাকায় হস্তান্তরের পর তদন্ত কর্মকর্তা গত বছরের ১৫ নভেম্বর, দ্বিতীয় দফায় ১৭ ডিসেম্বর ও সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সেনানিবাসে এসে আমার ও তনুর মা, আমাদের ছেলে রুবেল ও লাশ উদ্ধারের সময় উপস্থিত শিক্ষক কামাল শিকদারের সাক্ষ্য গ্রহণসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপর থেকে আর কিছুই জানি না।’ পিবিআইয়ের তদন্তে এ হত্যায় জড়িতরা শনাক্ত ও গ্রেপ্তার হবে বলে আশা করেন তিনি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কত বার কত স্থানে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি, তার হিসাব নাই, মামলার কোনো অগ্রগতি কেউ জানায় না। তনুর মৃত্যুবার্ষিকী এলে সাংবাদিকরা খোঁজখবর নেয়, আর কেউ খবর নেয় না।’ তিনি বলেন, ‘ডিএনএ রিপোর্ট আসতে তো পাঁচ বছর লাগার কথা না। ন্যায় বিচার পাব এমন কথা সবাই বলে আসছে। অচেনা কোনো নম্বর থেকে মোবাইলফোনে রিং এলেই ছুটে যাই- এই বুঝি মেয়ের ঘাতক আটকের কোনো খবর এলো! কিন্তু এখন আল্লাহর ওপরই বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited
error: Content is protected !!