সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেছে বেছে আধুনিক স্থাপনায় তাণ্ডব চালাল হেফাজত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১
  • ৩৫৪ বার

সারা দেশে শান্তিপূর্ণ হরতালের ডাক দিয়ে কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে তারা।

রোববার (২৮ মার্চ) হরতাল সমর্থনে সকাল থেকে বেছে বেছে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে আধুনিক সব স্থাপনায়। শহরের রেল স্টেশন, সিভিল সার্জন অফিস, পুলিশ সুপারের বাসভানসহ সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান, দু’টি মন্দির, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শহরজুড়ে সর্বত্র এখন ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। পোড়া গন্ধ চারদিকে।

সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছালে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কয়েকটি কোচের কাচ ভাঙচুর করা হয়। ট্রেন যেন চলাচল করতে না পারে, সে জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে আশপাশের রেলগেটের ব্যারিকেড বাঁকা করে ফেলা হয়েছে। রেললাইনের ক্ল্যাম খুলে ফেলা হয়েছে।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ভাঙচুর চালানো হয় রেল স্টেশনে। সেখানকার কম্পিউটারসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার ভয়াবহতায় ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রেলের পর সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ করতে জেলার প্রবেশমুখ আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে টোল প্লাজায় ভাঙচুর চালিয়ে টোল নেওয়া বন্ধ করে দেয় হেফাজতের সমর্থকরা।

বেলা ১১টার পর আগুন দেওয়া হয় জেলা পরিষদ ভবনে। সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, পৌরসভা ভবন ও সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন এবং পুলিশ সুপারের বাসভবনেও আগুন দেয় হেফাজতের কর্মীরা। বাদ যায়নি করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদান করা সেই সিভিল সার্জন অফিসও।

বেলা ১২টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল সমর্থনকারীরা। তারা থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালায়। পরে সেখান থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, হামলার ঘটনা ঘটেছে জেলার প্রেসক্লাবেও। এ সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক রিয়াজউদ্দিন জামি মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও।

এসব ঘটনা সামাল দিতে সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি চালায় ও টিয়ার শেল ছুড়ে। বিকেল পর্যন্ত জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়ে জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া গত তিনদিনে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নয়জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার একজন ও শনিবার পাঁচজন মারা যান। শনিবার সদর থানায় দায়ের হওয়া পৃথক তিন মামলা সাড়ে ছয় হাজার অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে, এসব বিষয়ে পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল সূত্র কথা বলতে চায়নি। তবে, সদর থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানান জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

www.somoynews.tv

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2023 DeshPriyo News
Designed By SSD Networks Limited