প্রস্তাবিত বাজেট দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই বাজেট কালোটাকাকে সাদা করার বাজেট। কীভাবে দুর্নীতি করা যাবে, তার বাজেট। যাতায়াত খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে; কারণ, এখানে সহজে দুর্নীতি করা যায়।’
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার গৃহীত কর্মসূচি ও নীতি: বাংলাদেশের কৃষিবিপ্লব ও পল্লী উন্নয়নের মূলভিত্তি’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-সমর্থক শিক্ষকদের ফোরাম সোনালী দল।
সরকার মিথ্যার ওপর টিকে আছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যত পরিসংখ্যান দেখানো হয়, সব বানানো ও মিথ্যা। এই বাজেট বে-নজির বাজেট। বাজেটে কর্মসংস্থান কোথায়? যারা ঢাকায় ছোটখাটো ব্যবসা বা কাজ করত, তারা গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামেও কাজ নেই।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ন্যূনতম গণতন্ত্র থাকলেও মানুষ একটা পথ পায়। সেখানকার শাসকেরা ভেবেছিল ৪০০ আসন পেয়ে যাবে, তাদের যে লক্ষ্য সংবিধান সংশোধন করে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু ভারতের মানুষ তা রুখে দিয়েছে।
ভারতে নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান থাকাতেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানই রাখেনি। নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা রাখেনি, আমলাতন্ত্রকে পুরোপুরি কুক্ষিগত করেছে। এই ধ্বংসাবশেষ থেকে আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’
জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করা মানে দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে খাটো করে দেখানোর সুযোগ নেই। দুঃসময়ে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সংসদ, আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান কিছু লোকের কবজায় চলে গেছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদকের কমিশনার বদলে দিতে পারে। এই রাজনৈতিক অবস্থার বদল না হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা সম্ভব হবে না, দুর্নীতিও কমবে না।
সরকারের দাবি করা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবিকে মিথ্যাচার দাবি করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, চাল, গম, তেল, চিনি ও ডালের মতো সামগ্রী আমদানি করতে হয়। পরিসংখ্যানের খেলা দেখে পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। যখন দেশের রাজনীতি খারাপ হবে, তখন অর্থনীতিও খারাপ হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হাফিজ। তাতে জিয়াউর রহমানের কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশে সার ব্যবহার হতো ৩ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। আর ১৯৮০-৮১ সালে সারের ব্যবহার হয় ৮ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগের কারণে গ্রাম পর্যন্ত সার পৌঁছে গিয়েছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন বলে আজিজ-বেনজীর নাকি তাদের লোক না৷ যখনই চোর ধরা পড়ে, তারা বলে এই চোর আমাদের না। এবারের বাজেট নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, এটি বে-নজির বাজেট। আসলেই এটি লুটপাটের বাজেট।’
সোনালী দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।