খালেদ গোলাম কিবরিয়াঃ৮০ এর দশকে বুঝ হওয়ার পরই আমার এলাকায় এন্টি আওয়ামী লীগ মুরুব্বীদের দেখতাম দেশ ভাগের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চৌদ্দ গৌষ্ঠীকে উদ্ধার করে ফেলতো । এটি শুধু একটি এলাকাই নয় মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করতে সারা দেশেই এভাবে একটি চক্র কাজ করতো । তারা প্রচার করতো পাকিস্তান আমলে আমরা অনেক ভাল ছিলাম , ছয় আনা কাগজের দিস্তা এখন ছয় টাকা । আর সব সময় বলতো মুজিব গাদ্দারী করে পাকিস্তান ভেঙ্গেছে । ভারতের কাছে দেশ বেচে দিয়েছে । ৭৪ এর চুক্তি নিয়ে তো কত রকমের অকথ্য গালাগাল চলতো !
কিন্তু ৯১ এর পর এরা যখন দেখলো দুই দশক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র দিয়েও দাবিয়ে রাখা যায়নি এবং নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে লালন করতে চায় তখন নতুন কৌশলে আবার স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করতে মাঠে নামে । প্রথমে বলে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক পরে বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা চান নি , তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে চেয়েছিলেন । ইতিহাসকে বদলে দিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন কুটচাল নিয়ে হাজির হন ।
ঠিক তেমনিই এখন পদ্মা সেতু নিয়ে তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে । যখন দেখা যাচ্ছে পদ্মা সেতুর সমস্ত ক্রেডিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ে নিচ্ছেন তখন তাদেরই একটি গ্রুপ বলছে “ এটা আপনার আমার ট্র্যাক্সের টাকা এটা কি তাদের বাপের টাকা “। আবার আরেক গ্রুপ বলছে চীনের টাকায় তৈরী । আরেক গ্রুপ বলছে তৈরী করছে ঠিকই কিন্তু টোলের টাকায় এটা আপনার আমার থেকে তুলে নিবে । তাদের আরেক গ্রুপ বলছে ১০ হাজার টাকার পদ্মা ব্রীজ করতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা তারাই পাগলের মত বলে এই টাকায় ১০০ টি পদ্মা সেতু করা যায় । যদি ১০ হাজার টাকা একটি পদ্মা সেতু করা যায় তাহলেতো ৩০ হাজারে তিনটি সেতু হবে ।
মোট কথা হলো এরা আওয়ামী লীগের কিছুই সহ্য করতে পারে না । সেতুর ব্যয় নিয়ে তাদের অবস্হা বিয়ের খরচের মত । একটি বিয়েতে মুল খরচ জামাই বউয়ের সাজ-সজ্জা গয়না-গাটি ছাড়াও যে বর যাত্রা , মিষ্টি , পান সুপারী বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হয় তা অনেকই মানতেই চান না । নদী শাসন কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খরচ যে মোট খরচের মধ্য তা তাদের ধারনার মধ্যেই নাই । তারা সবকিছুতেই খুঁত ধরে । প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয় ৩০ হাজার ১শ ৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৭শ ৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
মূল সেতু তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১শ ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪শ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয় বাবদ খরচ হওয়া ১ হাজার কোটি টাকা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত মূল সেতু তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯শ ৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
নদীশাসনের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৯ হাজার চার’শ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত নদীশাসনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭শ ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক, দুইটি টোল প্লাজা, দুইটি থানা ভবন ও তিনটি সার্ভিস এড়িয়া তৈরিতে বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৯শ ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৯৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
সেতু প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৫শ ১৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১শ ১৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া সেতুর দুই পাড়ে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয় ২ হাজার ৬শ ৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ইতোমধ্যেই পুরো টাকা খরচ করা হয়েছে।সেতু করার আগে বলেছে বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া এই সেতু করা অসম্ভব এখন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে সব আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সেতুটির কাজ করার পর এটির সফলতাকে খাটো করতে একেক সময় একেক কথা বলে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে ।
খালেদ গোলাম কিবরিয়া, উপদেষ্টা সম্পাদক, দেশপ্রিয় নিউজ।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply