নাসির উদ্দিনঃ লাশ দায় নেবে না।।
‘ভুল’ সংস্কৃত শব্দ। ‘খেসারত’ আরবি গোত্রের। দুই বিদেশি শব্দের বন্ধুত্বের বাংলা অভিব্যক্তিটি চমৎকার। ‘ভুলের খেসারত’ একত্র হয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে। কিন্তু কখনো কখনো এরা বড়ো অভিযোগও হয়ে ওঠতে পারে।
একটি মৃতদেহ গতকাল তেমন অভিযোগ শুনেছে। দেহটি তখন জানাজার খাটে। ছোট ভাই কবির শিকদার বললেন, “সফিক শিকদার এমন কিছু ভুল করেছেন যে ভুলের খেসারত ওনাকে, পরিবারকে দিতে হয়েছে। কুমিল্লার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আজ এমন থাকতো না। যদি উনি সেই সময়ে ওনার ভাগিনা দুলাল হত্যার বিচার চাইতেন। কিন্তু উনি ভুল করে ব্যক্তিপূজা করেছেন। এজন্য কুমিল্লার মানুষকে এখন সেই খেসারত দিতে হচ্ছে। আমরা ভুলের খেসারত দিচ্ছি”।
মৃতুতেও রাজনীতি জড়িয়ে থাকে। বিদায় নির্ভর করে সাফল্য ব্যর্থতার ওপর। ভাইয়ের এই রাজনৈতিক বিক্ষোভ; ব্যর্থতাকে নির্দেশ করে। ব্যর্থ হলে, লাশ হয়েও ক্ষমা নেই। রাজনীতি এমনই। ব্যর্থকে ক্ষমা করে না। দখলের রাজনীতিতে জীবদ্দশায় যিনি ব্যর্থ তাঁর লাশকে দায় চাপিয়ে কি হবে? ছাইচাপা দিয়ে ব্যর্থতা ঢাকা যায় না। বরং রাজনৈতিক পরাজয় মেনে নেয়া বুঝায়।
ক্ষমতার রাজনীতির পাদপীঠে থাকতে অসুর হতে হয়। হায়েনার হিংস্রতা আর চিতার ক্ষিপ্রতা লাগে। সেই যোগ্যতা সবার থাকে না। সফিক শিকদারেরও ছিল না। তিনি ভালো কর্মী ও ফলোয়ার ছিলেন। প্রচন্ড রক্ষণাত্মক।
একসময় পরিবার সামলানোর চাপ: বোঝায় পরিণত হয়। তিনি গাধা হয়েই থেকেছেন। শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিলো। জ্বলে ছাই হয়েছেন, আগুন বা ধোঁয়া দেখাননি। বাইরে হাত পেতেছেন, মিথ্যা বলেছেন ছোট হয়েছেন। গাধার দায়িত্ব ছাড়েননি। নেতাকর্মীদের চাপ ছিল পরিবার ছেড়ে নির্ভার হয়ে পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার। করেননি। মাত্র ২ হাজার ভোটে হেরেছেন। নির্বাচনে দল এবং পরিবার একাট্টা থাকলে ইতিহাস তখনও অন্যরকম হতে পারতো। অভিযোগ আছে পরিবারের কেউ কেউ তখন টাকা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন।
সফিক শিকদারের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সাহস ছিলো না। অন্যের ছাতার নিচে থাকতে নিরাপদ বোধ করতেন। এজন্য দুলাল হত্যার পরও ছাতা ত্যাগ করেননি। সে সময় তিনি নিজেকে নেতা দাবী করে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেও ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু সফিক শিকদার সেই মানুষ ছিলেন না। তাঁকে অভিযুক্ত করে লাভ নেই।
বাহারকে যখন ছাড়লেন, তখনও নিজে ছাতা হওয়ার চেষ্টা করেননি। অন্য ছাতায় আশ্রয় নিয়েছেন। পদ পেয়েও পদের সক্ষমতা বুঝেননি। হারানোর পর আক্ষেপ করেছেন। তখনও সুযোগ ছিল। আসলে সফিক শিকদারের সক্ষমতায় ঘাটতি ছিলো। এজন্যই পারেননি।
কুমিল্লার রাজনীতিতে আফজল খান দাপট ছিল একসময়। বর্তমান এমপি বাহার ছিলেন খানের অনুসারী। তিনি হাতে গোণা কয়েকজন অনুসারী নিয়ে সেই দাপট থামিয়েছেন। সফিক শিকদারও সেই অনুসারীদের একজন ছিলেন। এখন বাহার দাপট চলছে। এই দাপট থামাতে বাহারের চেয়ে দাপুটে নেতৃত্ব লাগবে। রাজনৈতিক লড়াইয়ের পথেই সেই নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। মৃতকে কিংবা কারো অযোগ্যতাকে দায় দিয়ে কিছুই হবে না। মানুষের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করা অন্যায়।
সাংবাদিক নাসির উদ্দিনের ফেইস বুক পোস্ট থেকে
Leave A Reply

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ ও আমাদের সম্পর্কে

All rights reserved by Desh Priyo News | Design and Developed by Sudipta Acharjee

Exit mobile version