বিবিসি বাংলাঃ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে, শুক্রবার বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে।

হেজবুল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পরেও লড়াই চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দিয়েছে হেজবুল্লাহ।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করছে, হাসান নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে সে হামলা চালানো হয়েছিল। এই হামলায় হাসান নাসরাল্লাহর সাথে হেজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারও নিহত হয়েছে।

আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “এখানে বার্তা খুব পরিষ্কার। ইসরায়েলি নাগরিকদের যারা হুমকি দেবে তাদের কীভাবে খুঁজে বের করতে হয় সেটা আমরা জানি। সেটা উত্তরে, দক্ষিণে কিংবা আরো দূরে হলেও আমরা খুঁজে পারবো।”

আইডিএফ বলছে, দক্ষিণ বৈরুতে হেজবুল্লাহর সিনিয়র নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন তখন সেখানে হামলা চালানো হয়। দক্ষিণ বৈরুতের এ জায়গাটি হেজবুল্লাহর একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

আইডিএফ তাদের ‘এক্স’ প্লাটফর্মে লিখেছে, হাসান নাসরাল্লাহ পৃথিবীতে আর আতঙ্ক ছড়াতে পারবেনা।

লেবাননে হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে।

হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গাডর্সের একজন ডেপুটি-কমান্ডার নিহত হয়েছে বলে ইরান নিশ্চিত করেছে।

এই হামলার পর ইরাকে তিনদিনের শোক ঘোষণা করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইসরায়েল সকল সীমা অতিক্রম করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ওই হামলা ‘যুদ্ধাপরাধ’- যার জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে বাধ্য করা উচিত।

ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুথিরা শোক প্রকাশ করে বলেছে,এর ফলে তাদের প্রতি সমর্থন আরো জোরালো হবে এবং তারা আরো বড় হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলি বাহিনী গত বেশ কয়েকদিন যাবত লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েল দাবি করছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহকে কাবু করতে তাদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে।

হেজবুল্লাহকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ দিয়ে আঘাত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েল পুরোদমে হামলা শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

দুটি আলাদা ঘটনায় হাজার হাজার পেজার এবং রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হওয়ায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

ইরান এখন কী করবে?

হেজবুল্লাহ নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের একের পর হামলা মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি করছে। এর মাধ্যমে তাদের মূল পৃষ্ঠপোষক ইরানকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে বলে লিখেছেন বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার।

তিনি লিখেছেন, গত কিছুদিন ধরে ইসরায়েল আর হেজবুল্লাহর মধ্যে চলা যুদ্ধে অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা রেখে আসছে ইরান। কিন্তু এখন তারা দেখতে পাচ্ছে, কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক তাদের মিত্রদের ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

১৯৯২ সাল থেকে হেজবুল্লাহর প্রধান হিসাবে রয়েছেন হাসান নাসরাল্লাহ। অনুগত কমান্ডারদের মাধ্যমে তিনি একটি মিলিশিয়া বাহিনী থেকে হেজবুল্লাহকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বেসরকারি সামরিক বাহিনীতে পরিণত করেছেন।

ইরানের রেভল্যুশনারি বাহিনীর সাহায্যে হেজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে বিশাল অস্ত্রশস্ত্রের ভাণ্ডার রয়েছে, যার বেশিরভাগই ভূগর্ভে লুকিয়ে রাখা আছে।

কিন্তু হাসান নাসরাল্লাহসহ দলটির অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পরে সংগঠনটি সক্ষমতা ও নামডাক- সব দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এরপরে অবশ্যই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ডাক উঠবে। তখন ইরান কী ভূমিকা নেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave A Reply

আমাদের সম্পর্কে

যোগাযোগ ও আমাদের সম্পর্কে

All rights reserved by Desh Priyo News | Design and Developed by Sudipta Acharjee

Exit mobile version