এড.আনিসুর রহমান মিঠু :পতনের কারন কি কি ??
একবার কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমাদের প্রার্থী ছিলেন জসিম মাষ্টার সাহেব। উনার পক্ষে বহু নেতা ছিলেন। একজন মন্ত্রী ছিলেন, একজন মন্ত্রী মর্যাদার ছিলেন, একজন হুইপ ছিলেন,আফজল খন সাহেব ছিলেন,আফজল খান সাহেবের প্রধান সেনাপতি হিসেবে আমিও ছিলাম। আমাদের কাজ ছিলো সন্ধ্যায় ভাষন দেয়া।
নির্বাচনের দিন সকালে আমার মা জিজ্ঞেস করলেন, মেম্বারি ভোট লতিফ মেম্বাররে দিতে হইবো বুজছি, চেয়ারম্যানি ভোট কারে দিতাম ? আমি বিস্মিত, মা জানেনা আমি কার নির্বাচন করছি !!
সেবার আওয়ামীলীগের দুজন প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি’রো দুজন। এরমধ্যে যার কর্মী পুলিং এজেন্ট কিছুই ছিলোনা, সেই কামাল চৌধুরী জয়ী হলেন।
পরদিন সন্ধ্যায় আমি আমাদের প্রার্থী জসিম স্যারের বাড়ি গিয়ে দেখি তিনি খাটে কাথ হয়ে না বসা না সোয়া অবস্থায় আছেন। আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। সামান্য নরে একই ভংগিতে রইলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আপনি কেন ফেইল করলেন। উনার মার্কা ছিলো রিক্সা। তিনি বললেন আটাশটি কারনে রিক্সা মার্কার পরাজয় হয়েছে।
আমি খুশী হলাম লোকটা অন্তত এনালাইসিস করেছে। বললাম প্রথম কারনটা কি, তিনি বললেন কর্মীরা কেউ কাজ করেনি। ওরা কেউ কেউ বক্তৃতা দিয়েছে অন্যারা মিটিংয়ে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকতো, আর মিছিল করতো।কারো কাছে ভোট চায়নি।
বললাম দ্বিতীয় কারন কি, বললেন কর্মীরা কেউ আন্তরিক ছিলোনা, বিভিন্ন নেতার অনুসারী হিসেবে আমার মিটিংয়ে ছিলো। বললাম বাকি ছাব্বিশটা কারন শুনতে ইচ্ছে করছেনা, চা দিতে বলেন।
তিনি একটি কাগজে ২৮টি কারন লিখেছিলেন, এর মধ্যে একটি কারন ছিলেন বিল ক্লিনটন, যার বিশেষ আমন্ত্রেনে (?? ) একজন মন্ত্রী নির্বাচনের সময় আমেরিকা সফরে ছিলেন।
আমার মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগের পতনের কারন গুলো নিয়ে কমপক্ষে সাতদিন ব্যাপি নিজেদের মধ্যে মিটিং হওয়া দরকার।
আমি দেশে বিদেশে আমার অনেক কর্মীকে ফোন করে বলেছি, তোর দৃষ্টিতে কিকি কারনে আওয়ামিলীগের পতন হয়েছে আমাকে লিখে দে।
আমি সকলের কাছ থেকে কারন গুলো নিয়ে, নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে কারন সমূহের একটি তালিকা তুলে ধরবো মনে করছি।
কয়েকজন জিজ্ঞেস করেছে, ভাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে কারো ভুল থাকলে বলা যাবে কিনা ? নাকি ভবিষ্যতে ঝামেলায় পরি!! আমাদের সকলের মধ্যে ভয়।আমি বলেছি সব আমার কাছে থাকবে কেউ জানবেনা।
আসলে আমরা এখন আর দলের কর্মী নাই। কর্মচারী হয়ে গেছি। এমন একটি গণতান্ত্রিক দলের এই অবস্থা কেন এবং কেমন করে হলো, সেটা নিয়েও সাত দিন ব্যাপি রুদ্ধদ্বার বিশ্লেষণ হওয়া উচিত।
আমি নেত্রীকে হোয়াটসঅ্যাপে লিখেছিলাম যে, ছাত্রলীগের আকার ছোট করুন। এতো বড় কমিটির ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করা যায়না।
৭০ জন ভাইস পেসিডেন্ট থাকলে প্রেসিডেন্টই সকলকে চিনেনা। এতে কমিটির মর্যাদা থাকেনা।
কাজের কাজ কিছুই হয় নাই,পরের কমিটির সদস্য সংখা ছিলো ৩৩০, ভাইস পেসিডেন্ট ৭৫ !! নেত্রী রাগ হতে পারেন বুঝেও, আমি সব কিছুই উনাকে মেসেজ দিয়ে জানাতাম। এখন হয়তো পরে দেখবেন, তখন সময়ও ছিলোনা। সব কিছুই তিনি করেছেন, দলকে মজবুত করা ছাড়া।
আমার মনে আছে আমি জেলা কমিটির ৪১ জন সদস্যের মধ্যে একজন হতে কতো ঝামেলা হয়েছে। পরের বার যখন সাংগঠনিক সম্পাদক হই, তখন শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষের ভীর ছিলো কে কোন পদে এলো জানতে।
আর এখন জেলা মহানগরের ছাত্রনেতা কারাকারা দলের লোকেরাও জানেনা।কেন্দ্রীয় কমিটি টাকা নিয়ে কমিটি দেয়। হায়রে রাজনীতি।
লিয়াকত শিকদার – নজরুল ইসলাম বাবুরা টাকা নিয়ে কমিটি করলে আমি সদস্যও হতে পারতামনা।
কারন আমার বিরুদ্ধে ছিলেন লোটাস কামালের মতো পাহাড় সমান টাকার মালিক।লোটাস কামাল সাহেবের আপন ভাতিজা আমার বিরুদ্ধে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলো। ঢাকায় ভোট করে কমিটি হয়েছিলো।
আমার টাকাই ছিলোনা, তবে ফুটানি দেখানোর জন্য একটা গাড়ী ছিলো।তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পপি আপা এবং সাধারণ সম্পাদক শিখর ভাইকে নিয়ে আমি নিজে ড্রাইভ করে ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। গাড়ীর কারনেও আমার একটু দাম ছিলো।তবে গাড়ী কখন তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় টেনশন ছিলো।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। পতনের কারন। কেন্দ্রীয় শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ বিশ্লেষণ করুন প্লিজ। এমন একটি ঐতিয্যবাহী দলকে দয়া করে আর নষ্ট হতে দেবেননা।
এবং কি কি করলে দলের আদর্শ মজবুত হবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুশীলন হবে, দলের ভেতর গনতন্ত্র আসবে, সর্বোচ্চ নেতার বিরাগভাজন হয়েও বড় নেতা বা এমপি মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকবে, সেসব উপায় ভেবে দেখুন।
যোগ্যদের বাতিল করতে করতে এমন সব মানুষ এমপি মন্ত্রী হয়েছে যা খুবই লজ্জাজনক। একজন এমপি তার নিজ এলাকায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, আমাদের নেত্রী মেক্সিকোতে একটি সফল জরায়ু সম্মেলন করেছেন !! পরে তাকে মন্ত্রীও করা হয়েছিলো।
দলের সকলের অনুরোধ , এখন অখন্ড অবসর, দয়া করে ভাবুন। ভবিষ্যৎ কর্মসূচী কি হবে বলুন। শুধু ক্ষমতা নয়, রাষ্ট্রের সার্থে আওয়ামীগের টিকে থাকা দরকার।একজন সামান্য কর্মীর মতামতও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ,গণতান্ত্রিক, আত্নমর্যাদা সম্পন্ন, জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে টিকে থাকতে, দলের মধ্যে কি কি পরিবর্তন আনা উচিত তা বলুন।
এড.আনিসুর রহমান মিঠু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক(২০০২-২০১২), কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগ