ইতালির ভেনিসের মেসত্রের পারকো পিরাগেত্তোয় আজ (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১২টায় জুমার নামাজের আয়োজন করা হয়েছে। ভেনিসে বসবাসরত মুসল্লিদের এই উন্মুক্ত জামায়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে একটি খবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে মাদরাসা তুল ইত্তিহাদ। মেসত্রের ভিয়া পিয়াভেস্থ একটি সুপার মার্কেট বন্ধ হয়ে যায় অনেক আগে। বন্ধ অবস্থায় অনেক বছর পড়ে থাকার পর জায়গাটি ভাড়া নেন ভেনিসের মাদরাসা তুল ইত্তিহাদ কর্তৃপক্ষ। বহু অর্থ ব্যয়ে তা সংস্কার করেন এবং মসজিদ ও মক্তব চালু করেন। প্রায় শতাধিক ছেলে মেয়ে সেখানে কোরান শিক্ষা নেয় এবং প্রতিদিন ৫ ওয়াক্তসহ জুমার দিনে অন্তত ৮ শতাধিক মুসল্লি একসাথে সেখানে নামাজ আদায় করেন। মাদরাসা তুল ইত্তিহাদ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এর বিরোধীতা করে স্থানীয় পৌরসভা। বাণিজ্যিক এরিয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করা যাবে না’সহ নানা অভিযোগে ওটা বন্ধ করার নোটিশ জারি করে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেজ্ঞ করে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত প্রাথমিক ভাবে পৌরসভার নোটিশ স্থগিত করলেও সম্প্রতি চুড়ান্ত রায় প্রকাশ করেছে। ওই রায়ে পৌরসভার নোটিশ বলবৎ রাখা হয়েছে। ফলে নামাজ আদায়সহ ধর্মীয় কার্যক্রম করা ওখানে নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। খবর বিজ্ঞপ্তিতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানান, নিম্ন আদালতের ওই রায় নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন, পাশাপাশি রাজপথেও প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদের অংশ হিসাবে প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় মসজিদের সামনের প্রধান সড়ক- ভিয়া পিয়াভে আটকে তারা জুমার নামাজ আদায় করবেন। কিন্তু এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ পিরাগেত্তো পার্কের উন্মুক্ত চত্ত্বরে নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। ইতালিতে কী মসজিদ নির্মান করা নিষিদ্ধ? আইনগত ভাবে মসজিদ নির্মান করা নিষিদ্ধ নয়। বরং ইতালিয় সংবিধানের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীন ভাবে তাদের ধর্ম চর্চা এবং প্রচার করতে পারবে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত ভাবে। কিন্তু সমস্যা হলো স্থানীয় পৌরসভা বা স্থানীয় সরকারগুলো এমন কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে রেখেছে, যা মেনে মসজিদ নির্মান করা প্রায় অবম্ভব। এসব বিধি-নিষেধকে স্থানীয় মিডিয়ায় বলা হয় লেজ্জে আনতি মসকেয়া (Anti-mosque law)। সত্যিকারার্থে যার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ভেনিসের মুসলিম কম্যুনিটি মনে করে, লেজ্জে আনতি মসকেয়ার (Legge anti-moschea) মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্ম পালনে বাধা দেয়া, ধর্ম প্রতিষ্ঠান নির্মানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ইতালিয় সংবিধান বিরোধী। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তোলা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, এর আগে ভেনিসের আরো দুটি মসজিদে অভিন্ন অভিযোগে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে একটি মসজিদ কমিটি আইন-আদালত করে নামাজ আদায়ের অনুমোদন পেয়েছে। অন্যটির জন্য কেউ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অনেক বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে জনগণের চাঁদায় কেনা মসজিদটি, যেনো কারো কোনো দায় নেই।
Add A Comment