আজকের পত্রিকা : ময়মনসিংহের ত্রিশালে হেলমেট ছাড়া তেল না পেয়ে ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীকে উঠিয়ে নিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) ছেলের বিরুদ্ধে। গত বুধবার দুপুরে ত্রিশাল পৌর শহরের মেসার্স ইভা ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এতে সরকারি নির্দেশনা ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন ফিলিং স্টেশন মালিকেরা ও সচেতন মোটরসাইকেলচালকেরা।
ইভা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরা জানান, গত বুধবার দুপুরে ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল নিতে আসেন স্থানীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ-৭) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের ছোট ছেলে সাদমান সামিন (২২)। এ সময় তাঁর মাথায় হেলমেট না থাকায় তেল দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে কর্মচারী আকাশ আহম্মেদের (২৪) ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পরে ১০-১২ জন এসে আকাশকে তুলে নিয়ে যান সামিনের অফিসে। সেখানে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান আকাশ। এ ঘটনায় হতভম্ব হয়েছেন আকাশ ও ইভা ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস আলী।
ইভা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী আকাশ আহম্মেদ বলেন, ‘“নো হেলমেট নো ফুয়েল” নীতি বাস্তবায়নে মালিক আমাদের বলে দিয়েছেন কেউ হেলমেট ছাড়া এলে তেল যেন না দিই। কিন্তু ওই দিন হেলমেট ছাড়া এক যুবক এসে বলে তেল দিতে, আমি না করলে তিনি কিছুটা রাগান্বিত হয়ে এমপির ছেলে বলে চলে যায়। আমি তাকে চিনতে পারি নাই বলে আমারও খারাপ লেগেছে। এর কিছুক্ষণ করে তিন-চারটি মোটরসাইকেলে ১০-১২ জন এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমার মালিকও সঙ্গে যায়।’
আকাশ আহম্মেদ বলেন, ‘আমাকে এমপির পৌর মার্কেটের একটি কক্ষে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। এরপর এমপির ছেলে সাদমান এসে তেল না দেওয়ার ব্যাখ্যা চান। তখন আমি ভয়ে করজোড়ে বলি জীবনে আর কখনো এমন ভুল হবে না, মাফ করে দেন দয়া করে। পরে তিনি আমাকে বলেন, “দেখ, ভালো করে আমাকে চিনে রাখ, আর কোনো দিন এমন ভুল হলে ক্ষমা নেই তোর”, পরে ছেড়ে দিলে চলে আসি।’
উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইভা ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী ইদ্রিস আলী বলেন, ‘অনেক বছর ধরে এই ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতি করে আসছি। তবে এমন পরিস্থিতির শিকার কখনো হয়নি। ১০-১২ জন এসে কর্মচারী আকাশকে উঠিয়ে নিতে চাইলে তখন আমারও মনে ভয় ঢুকে গেছে। পরে তাদের বলে আমার মোটরসাইকেলে করেই আকাশকে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমার ওপর হামলা হতে পারে সেই আশঙ্কায় আমি পরিচিত একজনের কাছে আশ্রয় নেই এবং তাঁরা আকাশকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’
ইদ্রিস আলী আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ত্রিশাল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমাদের ডেকে নিয়ে যান। এমপির ছেলে ছোট মানুষ বুঝতে পারে নাই বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।’
এদিকে এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরা। মোটরসাইকেলের চালকেরা বলছেন, সরকার ভালোর জন্যই আইন করেছে; সেটা এমপি-মন্ত্রী সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়া উচিত।
মোটরসাইকেলচালক সুজন হাওলাদার বলেন, ‘“নো হেলমেট নো ফুয়েল” নীতির আগে খুব একটা হেলমেট ব্যবহার করা হতো না। এখন নিয়মিত হেলমেট ব্যবহার করা হচ্ছে; এই আইন সরকার ভালোর জন্যই করেছে। তবে এমপি-মন্ত্রীর ছেলে আইন না মেনে তেল নিতে এসে প্রভাব খাটাবে, সেটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।’
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘এমপি সাহেবের ছেলে পাম্পে তেল নিতে গিয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। পরে তাঁর কয়েকজন বন্ধু ওই কর্মচারীকে তুলে নিয়ে আসেন। বিষয়টি পরে আমি সমাধান করে দিয়েছি।’
কর্মচারীকে উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সাদমান সামিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন সামিনের বাবা সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তিন দিন ধরে ময়মনসিংহ শহরের বাসায়, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে, যেটা মোটেও সত্য নয়।’
এর আগে ১০ মার্চ কলেজছাত্র ফয়সাল আহম্মেদকে উঠিয়ে বাসায় নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এমপি এ বি এম আনিছুজ্জামান ও তাঁর ছেলে সাদমান সামিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কলেজছাত্রের পরিবার।
আজকের পত্রিকা